Ajker Patrika

চলে গেলেন দিনাজপুরের বইপ্রেমী বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চলে গেলেন দিনাজপুরের বইপ্রেমী বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন

দিনাজপুরের বইপ্রেমী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মকবুল হোসেন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় জেলার এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। 

বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আজ দুপুর ২টায় শহরের সার্দেশ্বরী স্কুল মাঠে জানাজা শেষে সোনাপীর কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হবে। তাঁর মৃত্যুতে জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ শিরীন আখতার, দিনাজপুর জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী, এনজিও কর্মজীবী নারীসহ জেলার একাধিক রাজনীতিক শোক জানিয়েছেন।

প্রবীণ রাজনীতিক মকবুল হোসেন ছিলেন দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের একজন। শহরের কালিতলা সর্দারপাড়ায় নিজ বাড়িতে মানুষের জন্য ১০ হাজার বইয়ের সেঁওতি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এখানেই প্রতি মাসের সাহিত্য আড্ডা হয়। প্রকাশ করা হয় দ্বিমাসিক পত্রিকা সেঁওতি। 

একাত্তরের আগে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন মকবুল হোসেন। ১৯৭০ সালে জেলা ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনীতে সক্রিয় ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম কাউন্সিলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। নেতৃত্বের ধারায় ১৯৭৪ সালে দিনাজপুর আইন কলেজছাত্র সংসদ নির্বাচনের জিএস নির্বাচিত হন তিনি। 

 ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশের মতো দিনাজপুর শহরে যে সব আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মকবুল হোসেন। তবে জেল থেকে ফিরে আর আওয়ামী লীগের যোগ দেননি। আশির দশকের শুরুতে এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানের পর জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু করতে চেয়েছিলেন তিনি। 

তবে নব্বইয়ের দশকে রাজনীতিবিমুখ হয়ে লাইব্রেরিতে মগ্ন হন। ৩০ বছর যাবৎ বই সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে বইপ্রেমী মকবুল হোসেনকে প্রথমবারের মতো পুরস্কৃত করে দিনাজপুর জেলা পরিষদ। 

৯০ দশকের শেষের দিকে রাজনীতি বিমুখ হয়ে লাইব্রেরিতেই মগ্ন হন মকবুল হোসেনসেঁওতি সম্পাদক ও আড্ডার সঞ্চালক দিনাজপুর সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক গবেষক ড. মাসুদুল হক বলেন, ‘৯০ দশকের শেষের দিকে রাজনীতি বিমুখ হয়ে লাইব্রেরিতেই মগ্ন হয়েছেন তিনি। আগে শহরে নানা বিষয়ে আড্ডা হতো, পরে সেঁওতি পাঠাগারে নিয়মিত আড্ডা দিতে শুরু করি। ব্যক্তিগত হলেও পাঠাগারটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।’ 

দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজা নাথ উচ্চবিদ্যালয়ে থেকে মকবুল হোসেনের শিক্ষাজীবন শুরু। পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বিডি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। সে সময় কলেজের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। 

প্রয়াত খলিল উদ্দিন ও মর্জিনা বেগনের ১১ সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ মকবুল হোসেন বড় ভাই চিত্রশিল্পী তোজাম্মেল হোসেনের অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে আসেন। একইভাবে তাঁকে অনুসরণ করে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনুজসহ মেয়ে নারী অধিকার কর্মী মৌসুমী ফেরদৌসী ও ছেলে মুনতাসির মাহমুদ মিনার। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত