Ajker Patrika

ডিমলায় ৩ ফসলি জমি রক্ষাসহ ৭০০ কৃষকের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবি

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জুন ২০২৪, ১৬: ১০
Thumbnail image

নীলফামারীর ডিমলায় তিন ফসলি জমি রক্ষা এবং ৭০০ কৃষকের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষক ও গ্রামবাসী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কুটিরডাঙ্গা গ্রামে শত শত কৃষকের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জমির মালিক ও স্থানীয়দের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন আব্দুল আলিম। এ সময় কয়েক শ গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে আলিম বলেন, ডিমলার কুঠিরডাঙ্গা, রামডাঙ্গা, পচারহাট ও পার্শ্ববর্তী জলঢাকা উপজেলার চিড়াভিজা গোলনা ও খারিজা গোলনার পাঁচটি মৌজায় প্রায় ৯৫৭ একর তিন ফসলি জমি এবং ১৬০ একর জমিতে জনবসতি ও সরকারি স্থাপনা রয়েছে। এখানে কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন সরকারের তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনায় পাঁচটি গ্রামের ১ হাজার ২১৭ একর জমি হুকুম দখলে (মৌখিক সম্মতি) অধিগ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পরবর্তী সময়ে সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকার জমি অধিগ্রহণ করেনি। এর পর থেকে ওই জমি মালিকানা সূত্রে স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগ করে আসছেন। ২০১০ সালে পাউবো কর্তৃপক্ষ এসব জমির মালিকানা দাবি করে ৪৯২ দশমিক ৭১ হেক্টর ব্যক্তিমালিকানা জমি মেসার্স তুষুকা নামক ঠিকাদারি রিসোর্স লিমিটেডকে ইজারা দেয়। তুষুকা কর্তৃপক্ষ ওই জমিতে কার্যক্রম শুরু করলে এলাকাবাসী বাধা দেন। পরে জমির মালিকেরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়। এরপর উচ্চ আদালতের আদেশে সেই জমি কৃষকেরা ভোগদখল করে আসছেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সম্প্রতি পাউবো কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব তিন ফসলি জমিতে উঁচু বাঁধ দিয়ে জলাধার খননের কাজ শুরু করে। সেখানে প্রায় ৯৫৭ একর কৃষিজমি জলাধারের আওতায় পড়ে। ওই জমিতে কৃষকেরা এখন যেতে পারছেন না। পাউবো ও ঠিকাদারের লোকজন কৃষকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। জমির দখল ছাড়তে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। খননকাজের প্রতিবাদ করায় পাউবো কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৭০০ কৃষকের নামে কয়েকটি মিথ্যা মামলা করেছে।

আব্দুল আলিম বলেন, জমির মালিক ও স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী তাঁদের বৈধ কৃষিজমি দখলে নিয়ে জলাধার খনন করছে পাউবো। জমি অধিগ্রহণ–সংক্রান্ত কোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। নদীতে পানির প্রবাহ নেই। অথচ জলাধার খননের নামে তিন ফসলি জমি ও ফসল নষ্ট করা হচ্ছে। তাতে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন কমে যাবে।

ডিমলায় এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকাভুক্তভোগীরা জানান, জলাধার খনন করা হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে তাঁদের। তিন হাজার পরিবারের ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া উপায় থাকবে না। জমির সীমানা নির্ধারণের কথা বলে পাউবো মিথ্যাচার করেছে। তারা গ্রামবাসীকে মামলার ফাঁদে ফেলে খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, বুড়িতিস্তা একটি মরা নদী। নদীর উৎসমুখেই পানি নেই। পানির প্রবাহ নিশ্চিত না করে জলাধার খনন শুধু অর্থের অপচয়। শুকনো মৌসুমে এই প্রকল্প কৃষকের কোনো কাজেই আসবে না।

তবে পাউবো বলছে, জলাধার নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে অধিগ্রহণ করা ১ হাজার ২১৭ একর জলাধারে ৬৬৭ একরে নদী সম্প্রসারণ বা খনন করা হবে। এই খননকাজ শেষে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৫ হাজার ৫০০ একর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা মিলবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাউবোর অধিগ্রহণ করা জমির সীমানা ও মালিকানা যাচাইয়ের পর অনুমোদন সাপেক্ষে সেখানে খননকাজ শুরু করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত