Ajker Patrika

সৈয়দপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প: আশ্রয়ণের অধিকাংশ বাড়ি বিক্রি

  • ২০০৪ সালে গড়ে তোলা হয় এই প্রকল্প, নির্মাণ করা হয় দেড় হাজার বাড়ি।
  • আওয়ামী লীগ সরকারও সেখানে ৯৮টি বাড়ি নির্মাণ করেছিল।
  • অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দ নেওয়া অনেকেই সচ্ছল। সেখানে থাকেন না অনেকে।
রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভূমিহীন মানুষের আশ্রয়ের জন্য ২০০৪ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে উত্তরের জনপদের সর্ববৃহৎ ‘উত্তরা আবাসন প্রকল্প’ গড়ে তোলা হয়। এই প্রকল্পে ১ হাজার ৫৯৮টি বাড়ি রয়েছে। শর্ত অনুযায়ী বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই ভূমিহীন হতে হবে এবং বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি বিক্রি ও হস্তান্তর করা যাবে না। কিন্তু সেই শর্ত ভেঙে অনেক উপকারভোগী বাড়ি বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ দিয়েছেন ভাড়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ১ হাজার ২০০টির মতো বাড়ি বিক্রি হয়েছে।

উপজেলার বোতলাগাড়ী মৌজায় ঢেলাপীরে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাঁরা সচ্ছল ও যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আমিন হোসেন দিপু বলেন, জরিপে দেখা গেছে, এই আবাসনে ২০০৪ সালে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা শর্ত ভেঙে প্রায় ১ হাজার ২০০টি বাড়ি বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া ২০২৪ সালে নতুন করে তৈরি ৯৮টি বাড়িতে বসবাসকারীরা বরাদ্দ না নিয়ে জোর করে থাকছেন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখানকার ৯০ শতাংশ বাড়ি অবৈধ দখলে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বাড়িগুলো দখলমুক্ত করতে গেলে এর বাসিন্দারা বাধা দেন। আমাকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রক্ষা পাই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ২০০৪ সালে উপজেলার বোতলাগাড়ী মৌজায় ঢেলাপীরে তৎকালীন সরকার উত্তরা আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলে। সে সময় সেখানে দেড় হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া বিগত শেখ হাসিনা সরকার ২০২৪ সালে সেখানে আরও ৯৮টি বাড়ি তৈরি করে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৫৯৮টি বাড়ি রয়েছে। ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সেখানে দুই শতক জমিসহ একটি করে বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয় উপকারভোগীদের।

আবাসন প্রকল্পের ৩৪/২ নম্বর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আকবর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়িটি তাঁর নামে বরাদ্দ নয়। এর মূল মালিক কলিম উদ্দিন। কলিমের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বাড়িটি কিনেছেন তিনি।

একইভাবে রশিদুল হকের ২/৭ নম্বর বাড়ি কিনেছেন আয়াস আলী। ২/৬ নম্বর বাড়ি মমেনা বেগমের কাছ থেকে কিনে আশরাফুল ইসলাম গুদাম বানিয়েছেন। আর ২/৯ নম্বর বাড়ি জাহানারা বেগম বিক্রি করেছেন মাঝিয়া বেগমের কাছে।

বরাদ্দ পেয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী কয়েকজন অভিযোগ করেন, যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকের নিজ বাড়ি রয়েছে। কয়েকজনের চারতলা বাড়ি রয়েছে। তাই আশ্রয়ণের প্রায় ২৬টি বাড়িতে তালা ঝুলছে। অনেকে একেকটি বাড়ি ১ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। যাঁরা বাড়ি কিনেছেন, তাঁদের অনেকে নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। তদন্ত করে অবৈধ ক্রেতাদের উচ্ছেদের দাবি জানান তাঁরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক বৈধ বাসিন্দা বলেন, ‘বরাদ্দপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই তাঁদের বাড়ি বিক্রি করেছেন। আমার বাড়ির পাশের বাড়িটি যাঁর নামে বরাদ্দ ছিল, তিনি সেটি বিক্রি করে দিয়েছেন। যিনি কিনেছেন, তিনি মাদক কারবারে জড়িত। গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের আখড়া। এতে এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকা দায়।’ তিনি আরও বলেন, মো. সেলিম হোসেন নামের একজনকে ৬৯/৭ নম্বর বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেলিম ও তাঁর এক ছেলে সরকারি চাকরি করেন। তাই আবাসনের বাড়িতে তাঁরা থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি তালাবদ্ধ।

এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে ওই মৌজার সহকারী ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে শর্ত ভেঙে আবাসনের বাড়ি বিক্রির বিষয়টি জেনেছি। আবাসনের বাড়ি দখলমুক্ত করতে শিগগির সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারা দেশে আরও ১০ দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

‘আজ বুঝলাম, সময়ের কাছে মানুষ কত অসহায়’—মৃত্যুর আগে স্ট্যাটাস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

রামদা হাতে ভাইরাল সেই সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

জগন্নাথপুরে এসএসসিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রাইদা হতে চায় চিকিৎসক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত