Ajker Patrika

আঙুলের সমস্যায় পেটে অস্ত্রোপচার: কবর থেকে তোলা হলো মাইশার মরদেহ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
আঙুলের সমস্যায় পেটে অস্ত্রোপচার: কবর থেকে তোলা হলো মাইশার মরদেহ

হাতের আঙুলের অপারেশনের সময় কুড়িগ্রামের শিশু মারুফা জাহান মাইশার (৫) মৃত্যুর ঘটনায় মামলার তদন্তের জন্য কবর থেকে মরদেহ তুলেছে পুলিশ। আজ সোমবার দুপুরে আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ মাইশার মরদেহ তোলে।

সোমবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেদওয়ান ইসলাম এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকার রূপনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক নয়ন দাসের উপস্থিতিতে মাইশার মরদেহ তুলে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। 

তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন দাস জানান, আদালতের আদেশে সোমবার কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে কবর থেকে মাইশার মরদেহ তুলে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে শিশুটির মরদেহ দাফনের জন্য আবারও তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘মাইশার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন। তবে আমরা অন্যান্য দিকেও তদন্তের আওতায় রেখেছি। মাইশার মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসকদের অবহেলা ছিল কি না তাও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।’ 

যে হাসপাতালে অপারেশন করা হয়েছিল সেটি অপারেশনের জন্য উপযুক্ত ছিল কিনা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের কার কতটুকু দায় ছিল তাও বিবেচনায় নিয়ে সঠিক ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান এই তদন্ত কর্মকর্তা। 

শিশু মাইশার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের পৌর এলাকার ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়া গ্রামে। সাড়ে চার বছর আগে ৯ মাস বয়সে চুলার আগুনে মাইশার ডান হাতের আঙুল পুড়ে কুঁকড়ে যায়। গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে মাইশার আগুনে পোড়া হাতের আঙুলের অস্ত্রোপচার করার সময় শিশুটির মৃত্যু হয়। 

পরে সেদিনই শিশুটির মরদেহ নিয়ে কুড়িগ্রামে ফিরে আসেন তার মা-বাবা। দাফনের আগে শিশু মাইশার গোসল করানো নারীরা দেখতে পান, মাইশার নাভির নিচে পেট জুড়ে কেটে সেলাই করা। এ ঘটনা প্রকাশ হলে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়। 

শিশুটির পরিবারের দাবি, হাতের অস্ত্রোপচার করার সময় তাঁদের মেয়ের পেট কেন কাটা হয়েছে তা তারা জানেন না। এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানায় শিশুটির পরিবার ও এলাকাবাসী। পরে এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। হাসপাতালটি নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিল বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

পরে ৫ ডিসেম্বর মাইশার বাবা মোজাফফর হোসেন বাদী হয়ে অস্ত্রোপচারের আয়োজনকারী চিকিৎসক আহসান হাবীব, অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম ও অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক রনির নাম উল্লেখ করে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের অজ্ঞাত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিরপুরের রূপনগর থানায় মামলা করেন।

তবে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিৎসক আহসান হাবীব দাবি করেন, ‘তিনি অস্ত্রোপচার করেননি। রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেছেন। শিশুটির মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা। হাতের কাটা অংশে স্কিন জোড়া দিতেই পেটের নিচের অংশ থেকে স্কিন কেটে নিয়ে সেলাই করা হয়েছিল। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই। অ্যানেসথেসিয়ার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত