Ajker Patrika

শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে পুলিশ-চিকিৎসকের ভিন্ন বক্তব্য

কাউনিয়া ও পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে পুলিশ-চিকিৎসকের ভিন্ন বক্তব্য

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে নয়ন চন্দ্র (২৩) নামে এক টাইলস শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে পীরগাছা উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্মশানে তাঁর সৎকার করা হয়। তবে ওই যুবকের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ ও চিকিৎসকের ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ওই যুবক কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে পৌরসভার হাজিরপাড়া গ্রামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে টাইলসের কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পরেন। পরে উদ্ধার করে হারাগাছ ৩১ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক বলছে, ওই যুবক শারীরিক লক্ষণ অনুযায়ী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সে মারা গেছেন। তবে শ্রমিক ও পুলিশ বলছে, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। 

মৃত নয়ন চন্দ্র পীরগাছা উপজেলার অনন্তরাম বসশ্যপাড়া গ্রামের নির্মল চন্দ্র রায়ের ছেলে। 

হারাগাছ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল মোহন্ত বলেন, নয়ন চন্দ্রসহ চারজনের একটি টিম গত কয়েক দিন ধরে হারাগাছ পৌর এলাকার হাজিরপাড়া গ্রামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বসতবাড়িতে টাইলস শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে তিনি (নয়ন চন্দ্র) বাথরুমের দরজা বন্ধ করে ভেতরে একাই টাইলস ফিটিংয়ের কাজ করছিলেন। এ সময় টিমের অন্য শ্রমিকেরা পাশের ঘরে কাজ করছিলেন। দীর্ঘক্ষণ নয়ন চন্দ্রের সারা না পেয়ে অন্য শ্রমিকেরা ডাকাডাকির পর দরজা ভেঙে বাথরুমের ভেতর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হারাগাছ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। পরে ওই যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হারাগাছ থানা-পুলিশকে অবগত করেন। খবর পেয়ে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটনে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। 

ওই বাড়িতে টাইলস ফিটিংয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ধারণা, নয়ন চন্দ্র অতিরিক্ত গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।

তবে হারাগাছ ৩১ শয্যা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুর প্রায় পৌনে দুইটার দিকে কয়েকজন শ্রমিক নয়ন চন্দ্র নামে এক যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা যান। 

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহানুর রহমান বলেন, ‘নিহত নয়ন চন্দ্রের বাম হাতের মুঠো শক্ত এবং ওই হাতের ছোট আঙুলে জখম ছিল। ডান হাত, দুই পা এবং শরীর স্বাভাবিক ছিল। কোথাও জখম ছিল না। যদি শরীরের কোনো স্থান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তাহলে সেই স্থান শক্ত হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, নয়ন চন্দ্রের বামের হাতের মুঠো শক্তের লক্ষণ অনুযায়ী বিদ্যুতায়িত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হাসপাতালে আসা শ্রমিকেরা ওই যুবকের মৃত্যুর সঠিক কারণ বলতে পারেননি।’

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ওই যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দুপুরে প্রচণ্ড তাপ দাহ ছিল। স্থানীয়রা, শ্রমিক এবং নিহতের পরিবারের ধারণা-প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক করে ওই যুবক অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তবে বিদ্যুতায়িত হয়ে নয়। যে ঘরে ওই যুবক টাইলস ফিটিংয়ের কাজ করছিলেন, সেখানে বিদ্যুতের সংযোগ ছিল না।’ 

ওসি রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘ওই যুবকের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো অভিযোগ না থাকায় পরিবারের লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের মুচলেকা নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাতেই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।’

পীরগাছা উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নিহত ওই যুবকের বাড়ি তাঁর এলাকায়। মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি নিজেই মঙ্গলবার রাতে হারাগাছ থানায় গিয়েছিলেন। প্রচণ্ড গরমে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত