Ajker Patrika

রাসায়নিকের গুদামে আগুন: বিষাক্ত গ্যাস ও পদার্থে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি

  • নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা।
  • স্বজনদের কাছে ১৬টি মরদেহ হস্তান্তর।
  • বমি, মাথা ঘোরার ওষুধ বিক্রি বেশি।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ০৬
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি কারখানার ফটকে দায়িত্ব পালন করেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ফোরকান মোল্লা। ছয় দিন আগে পাশের রাস্তায় রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনার পরদিন তাঁর চোখে জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট ও বমিভাব দেখা দেয়। চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। একই রাস্তার আরেকটি কারখানার নিরাপত্তারক্ষী জুয়েল খানের কাছাকাছি রাসায়নিকের ড্রাম ছিটকে পড়েছিল। ড্রাম থেকে ছড়িয়ে পড়া গ্যাসে অসুস্থ হলে তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। রাসায়নিক কারখানার আশপাশের দুই শ থেকে তিন শ মিটারের মধ্যে থাকা বহু মানুষ অসুস্থ হয়েছে।

এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির বিশেষজ্ঞরা রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম এম এস আলম ট্রেডার্সে মজুত রাসায়নিক দ্রব্য এবং তার বিষাক্ত প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। স্থানীয় লোকজনকে দুর্ঘটনাস্থলের ১৫০-৩০০ মিটার এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে এখনো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ রয়ে গেছে, যা নিরাপদে সরিয়ে নিতে আরও তিন-চার দিন সময় লাগবে বলে ফায়ার সার্ভিস শনিবার জানিয়েছে।

স্থানীয় লোকজনও বলছেন, আগুনে পোড়া রাসায়নিক পদার্থ থেকে ছড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাস এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অনেকে বিভিন্ন মাত্রায় অসুস্থ হয়েছেন। এরই মধ্যে শিশুসহ এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হয়েছে, আর কত দিন এর প্রভাব থাকবে, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। গতকাল রোববার ঘটনাস্থল এবং সেখান থেকে কয়েক শ গজ দূর পর্যন্ত জায়গার দোকানি, চাকরিজীবী, স্থায়ী বাসিন্দাসহ বিভিন্ন শ্রেণির অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম এবং পাশের পোশাক কারখানার অগ্নিকাণ্ডের ছয় দিন পার হলেও এলাকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ধোঁয়া কমলেও ভবনগুলোকে এখনো নিরাপদ ঘোষণা করা হয়নি। গুদামের ভেতরে ও বাইরে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডসহ বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি রয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, এসব গ্যাস স্থানীয়দের শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে স্বল্পমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিরও আশঙ্কা রয়েছে।

১৪ অক্টোবর দুপুরে মিরপুরের রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়ীর ওই রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম এবং পাশের একটি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পোশাক কারখানা থেকে ১৬ জনের অঙ্গার হওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানিয়েছিল, রাসায়নিকের গুদামে ৬-৭ ধরনের পদার্থ মজুত ছিল। ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্প কারখানাগুলোতে এসব উপাদান ব্যবহার করা হতো। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে গুদাম থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া এবং গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।

আলম ট্রেডার্স নামের গুদামে মূলত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ব্লিচিং পাউডার, ডিটারজেন্ট ও অন্যান্য দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ছিল। এগুলো আগুনে পুড়লে বিক্রিয়া করে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস ও বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ তৈরি করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ রকম বড় অগ্নিকাণ্ডের প্রথম কয়েক দিন ধোঁয়া ও গ্যাসের ঘনত্ব বেশি থাকে, পরে ধীরে ধীরে কমে যায়। কিছু রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ মাটিতে থেকে পরবর্তী কিছুদিন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। দাহ চলার সময় উচ্চমাত্রার কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাস সৃষ্টি হয়। এসবের কারণে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, গলাব্যথা, ব্রঙ্কাইটিস বা দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে। এমনকি তা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ক্লোরিনেটেড অর্গানিক যৌগ ও ডাইঅক্সিন তৈরি হলে দেখা দিতে পারে আরও কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা।’

পরিবেশবিদেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে রাসায়নিক পদার্থ পুড়ে ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে সব সময় ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণার (পিএম ২.৫ ও পিএম ১০) পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। ধোঁয়ায় থাকা ভারী ধাতুসহ বিষাক্ত উপাদান জলাধার ও মাটিতে মিশে ভবিষ্যতে আরও বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। কয়েক দিন পর্যন্ত এলাকাবাসীর মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলাকার কারও হাঁপানি (অ্যাজমা), দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ ও ফুসফুসের টিস্যুর প্রদাহ থাকলে তাদের অবস্থা গুরুতর হতে পারে। তাদের উচ্চমাত্রার ওষুধ ও স্টেরয়েড নিতেও হতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্ট নেই, তাদেরও প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এখানে ছড়ানো বিষাক্ত গ্যাসগুলো শরীরে ঢুকলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা; যেমন শ্বাসনালির ক্ষতি, সিওপিডি ও ফাইব্রোসিস তৈরি হতে পারে।

গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিয়ালবাড়ীর কে ব্লকের ৩ নম্বর সড়কে পুলিশ ও অগ্নিনির্বাপক বাহিনী দায়িত্বে রয়েছে। ওই সড়কে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীতের চায়ের দোকানটি খোলা। দোকানি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইমরান হোসেন জানান, ঘটনার পর থেকে মোট চার দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। শুরুতে বাতাসে গ্যাসের মাত্রা ছিল বেশি। রোববার থেকে কিছুটা কমেছে।

কে ব্লকের ২, ৪ নম্বর এবং মূল সড়কের পশ্চিম দিকের দুটি উপসড়ক মিলিয়ে ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যায়।

প্লটগুলোর কাছেই রয়েছে ওষুধের দোকান আরফান ফার্মা। সেখানকার কর্মী মেহেদী হাসান জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বেশি লোক এসেছেন বমি, সর্দি ও মাথা ঘোরার ওষুধ নিতে।

১৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিবেদক জানান, রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় লাগা আগুনে নিহত ১৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রাত ১০টার পর ঢামেক মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মরদেহগুলো হস্তান্তর করেন রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান।

পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আজ (গতকাল) রাতে মালিবাগ সিআইডি ফরেনসিক থেকে ১৬ জনের লাশের ডিএনএ নমুনা আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। স্বজনদের খবর দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এনে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এ সময় দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রকৌশলী মো. জাকির হোসাইন স্বজনদের কাছে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেন।

ডিএনএ নমুনা অনুযায়ী হস্তান্তর করা মরদেহগুলো হলো বরগুনার বামনা উপজেলার মৃত ওমর ফারুকের মেয়ে মাহিরা আক্তার (১৪), ভোলার লালমোহনের দলিগর নগর গ্রামের ওয়াজি উল্লাহর মেয়ে নার্গিস আক্তার (১৮),শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নিজ পাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে ছানোয়ার হোসেন (২৫), গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে নূরে আলম সরকার (২৩), বরগুনার আমতলীর দাড়িকাটা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে আল মামুন (৩৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের তিলকনগর গ্রামের নজু মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলাম রবিন (২০), সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার গোল্লা রাজাপুর গ্রামের রতন মিয়ার মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৫), বরগুনা সদরের ইসলামপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে খালিদ হাসান সাব্বির (২৯), নাটোরের সিংড়ার কৃষ্ণপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে আব্দুল আলিম (১৪), নেত্রকোনার বারহাট্টার নুরুল্লা গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে জয় মিয়া (২০), মোহনগঞ্জের সাউথখালী গ্রামের নয়ন মিয়ার মেয়ে আসমা আক্তার (১৩) এবং একই উপজেলার জয়পুর গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমেদ (১৮), মদন উপজেলার কদমশ্রী গ্রামের সনু মিয়ার মেয়ে মুনা আক্তার সামিয়া (১৬), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার পশ্চিম নওদাবাস গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে মৌসুমী খাতুন (২২), শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর গ্রামের মুছা দেওয়ানের মেয়ে মুক্তা বেগম (৩৬) এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের নাজমুল ইসলাম রিয়াজ (৪০)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গলায় রশি পেঁচানো নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডোবায় নছিমনচালকের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ওমর আলী শেখ (৫০) নামের এক নছিমনচালকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে মোবারকগঞ্জ চিনিকল ফার্মের সড়কের ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণ, নছিমনচালককে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত ওমর আলী কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার হাটবেলাটপুর গ্রামের ছাত্তার শেখের ছেলে।

বারোবাজারের ইসমাইল নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বারোবাজারে শ্রমিকের কাজ করতাম। কিছুদিন আগে ওমর আলী নছিমন কিনেছে। সে বারোবাজারের মাছের ভাড়া টানে। সকালে তার মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ হচ্ছিল না। পরে জানতে পারি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির গলায় ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ রয়েছে। এ ছাড়া রশি দিয়ে তাঁর গলা পেঁচানো। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাহাড়ে ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পেলেন কৃষক জয়নাল

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ( রাঙামাটি)
৩৩ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষক জয়নাল আবেদীন। ছবি: আজকের পত্রিকা
৩৩ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষক জয়নাল আবেদীন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কৃষক জয়নাল আবেদীন এ বছর ৩৩ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন। ভালো ফলন পাওয়ায় তিনি লাভের আশা করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি।

উপজেলার ১ নম্বর চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রেশম বাগান ব্লকের বারঘোনিয়া তঞ্চঙ্গাপাড়ায় জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন কৃষক জয়নাল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, ৩৩ শতক কৃষি জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। চলতি বছরের বোরো মৌসুমে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ভুট্টার বীজ, সার ও সাইনবোর্ড পেয়েছেন। এ ছাড়াও একই জমিতে সাথি ফসল হিসেবে লালশাক, ফরাস শিম ও টমেটো চাষ করেছেন। বর্তমানে জমিতে ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ভুট্টা বিক্রির আশা করছেন তিনি।

এদিন কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবীব রেশমবাগান তঞ্চঙ্গাপাড়ায় কৃষক জয়নাল আবেদীনের ভুট্টা চাষ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে ভুট্টা চাষ কম হলেও রেশম বাগান তঞ্চঙ্গাপাড়ায় এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় কাপ্তাই উপজেলায় চারটি ভুট্টা প্রদর্শনীর মধ্যে একটি কৃষক জয়নাল আবেদীনকে দিয়েছিলাম। ভুট্টা চাষে উনার ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। আশা করছি, উনি ভালো লাভ করতে পারবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত