Ajker Patrika

‘এটা হাতের কাজ, লাভ নির্ভর করে পরিশ্রমের ওপর’

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
খানসামা উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পাকেরহাট বেলতলী মার্কেটে দা, ছুরি ও চাপাতি বানাতে ব্যস্ত কামারশিল্পীরা। আজ রোববার (১ জুন) দুপুরবেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খানসামা উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পাকেরহাট বেলতলী মার্কেটে দা, ছুরি ও চাপাতি বানাতে ব্যস্ত কামারশিল্পীরা। আজ রোববার (১ জুন) দুপুরবেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘লোহার দাম, কয়লার দাম, শ্রমিকের মজুরি সবই বেড়েছে। তাই দামেরও পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদের আগে পরিশ্রম করলে কিছুটা লাভ হয়। এটা হাতের কাজ, লাভ নির্ভর করে পরিশ্রমের ওপর।’ কথাগুলো বলেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট বেলতলী মার্কেটের কামার সাঞ্জু রায়।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতির মতো ধারালো সরঞ্জাম বানাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তাঁর মতো সেখানকার অন্য কামারশিল্পীরাও এই ঈদ ঘিরে এসব ধারালো জিনিস বানাচ্ছেন।

মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এই ঈদে কোরবানিকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কামারপাড়াগুলো কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত হয় দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতির মতো ধারালো সরঞ্জাম। এসব সরঞ্জাম তৈরিতে রাত-দিন কাজ করছেন কামারশিল্পীরা।

আজ রোববার (১ জুন) উপজেলার পাকেরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, কামারের দোকানগুলো টুংটাং শব্দে মুখর। কয়লার আগুনে লোহা পেটাতে পেটাতে ঘাম ঝরছে শ্রমিকদের। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও বিরাম নেই তাঁদের হাতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দা, ছুরি, চাপাতি ও বঁটি তৈরির কাজ। একই সঙ্গে পুরোনো যন্ত্রপাতি শাণ দিতেও অনেকে তাঁদের কাছে আসছেন।

স্থানীয় কামাররা জানান, সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তাঁদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক স্থানে বিক্রি হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি। চাহিদা মেটাতে হিমশিম দোকানিরা হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁরা আরও জানান, স্প্রিং (পাকা) লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি সরঞ্জাম বেশি টেকসই হয়, আর দামও বেশি। অন্যদিকে কাঁচা লোহা অপেক্ষাকৃত সস্তা হলেও মানে কিছুটা পিছিয়ে। এ ছাড়া অ্যাঙ্গেল, রড, ব্লক বার ও গাড়ির পাত ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন কাটার সরঞ্জাম।

বর্তমানে লোহার দাম প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৯০ টাকা এবং স্প্রিং লোহা ১০২ থেকে ১২০ টাকা। কয়লা বিক্রি হচ্ছে, কেজিপ্রতি ২২ থেকে ২৫ টাকায়। উপকরণ ও মজুরি বাড়ায় লাভের পরিমাণ কমলেও এই ঐতিহ্যবাহী পেশাকে ধরে রেখেছেন কামারেরা।

সরঞ্জামের বর্তমান বাজারদর অনুসারে, প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বড় ছুরি ৩৫০ থেকে ৬০০, ছোট ছুরি ১০০ থেকে ২০০, কুড়াল ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, চাপ দা ১৫০ থেকে ২০০, বঁটি ৬০ থেকে ২০০ টাকা এবং চামড়া ছড়ানোর ছুরি ২০ থেকে ১০০ টাকায়।

পাকেরহাট বাজারের কামার জগদীশ রায় বলেন, ‘বছরের অন্য সময় কাজের চাপ কম থাকে, কিন্তু কোরবানির ঈদের আগে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিত, তাহলে এই পেশায় থাকা অনেকেরই উন্নতি হতো।’

তবে দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিবছর এসব বঁটি, ছুরি ও চাকুর দাম বেড়েই চলেছে। বালাপাড়া গ্রামের সাব্বির হোসেন ও লিটন ইসলাম, ছাতিয়ানগড়ের নাসির ইসলামসহ আরও অনেকে পুরোনো বঁটি, চাপাতি শাণ দিতে এসেছেন পাকেরহাট বাজারে। তাঁরা বলেন, কোরবানির ঈদে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য এসব জিনিস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই নতুন কেনা ও পুরোনোগুলোয় শাণ দেওয়া দুটোই করতে হয়।

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘সমাজের উন্নয়নে প্রতিটি পেশার মানুষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কামারদেরও অবদান কম নয়। তাই সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, উপজেলা পর্যায়ে কামারদের ঐতিহ্য রক্ষা ও তাদের কাজের পরিধি বাড়াতে আমরা কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত