Ajker Patrika

সংসারের হাল ধরেও থেমে নেই দুই ভাইয়ের পড়াশোনা

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
সংসারের হাল ধরেও থেমে নেই দুই ভাইয়ের পড়াশোনা

অর্জুন (১৭) ও অজিত (১৪) দুই ভাই। তাঁদের পরিবারে আর্থিক দৈন্যতা। সংসার চালাতে তারা কাজ করে কর্মকার হিসেবে। তবে থেমে নেই তাঁদের পড়াশোনা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো জীবন-যাপন করতে না পারলেও তারা পড়াশোনা শেষে চাকরি করতে চায়।

অজিত ও অর্জুন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের দুলাল কর্মকারের ছেলে। অজিত দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অর্জুন একই বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩ দশমিক ৩৯ পেয়েছে। পরীক্ষায় পাস করেও অর্থের অভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে অর্জুন।

অজিত ও অর্জুনের বাবা ঢাকা শহরে রিকশা চালাতেন। তাদের বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসার আর লেখাপড়া পুরো খরচ এসে দাঁড়ায় দুই ভাইয়ের ওপর। তাদের মা গৃহিণী। এই বয়সে কর্মকার শিল্পে কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে অজিত ও অর্জুন। তাদের বসতবাড়ির জায়গায় ছাড়া আর জমি নেই।

অর্জুন আজকের পত্রিকাকে জানায়, ছোট ভাই অজিত যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত, তখন সে সকাল ৯টায় স্কুলে যেত, ১২টায় স্কুল থেকে এসে দুপুর ১টার দিকে গ্রামের ভুট্টু কর্মকারের সঙ্গে কর্মকার শিল্পের কাজ করত। দিন শেষে ৫০-৬০ টাকা মজুরি পেত, তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চলতো তাদের। 

অল্প বয়সে কর্মকারের কাজ কেন করা হয় জানতে চাইলে অর্জুন জানায়, বাবার আয়ে কোনোমতে সংসার চলে। তা ছাড়া বাবা অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার খরচও তো রয়েছে। কয়েক বছর আগে অজিত ছোট থাকায় অর্জুনকে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে। 

অর্জুন বলে, ‘স্কুলে পড়তে আমার ভালো লাগে, কাজ না করলে খাব কী? আমি কাজ শিখে বছর দুয়েক আগে বিরামপুর-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে একটি টিনশেডের দোকানঘর ১ হাজার ৫০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে এখানে কর্মকার শিল্পের জিনিসপত্র বানিয়ে বিরামপুরসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি।’ তাঁরা লেখাপড়া শেষে চাকরি করতে চায়। সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে নিজেদের পড়াশোনা আরও ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারত বলে জানায় অর্জুন। 

বিরামপুর হাটে আজ শনিবার নিজেদের তৈরি করা ধারালো সামগ্রী নিয়ে দোকান বসায় অজিত কর্মকারদুলাল কর্মকার বলেন, ‘আমি ঢাকা শহরে রিকশা চালাতাম। অনেক দিন ধরে আমি অসুস্থ। এখন আর ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারি না, কষ্ট হয়। এ জন্য ছেলেরা কর্মকারের কাজ করে।’ 

অর্জুনের সহপাঠী রঞ্জিত চন্দ্র মহন্ত বলে, ‘অর্জুনদের পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা নেই। তার বাবা অসুস্থ এখন আর রিকশা চালাতে পারে না। মা বাড়িতেই থাকেন, মাঝেমধ্যে বাইরে কাজ করেন। অর্জুন আর্থিক সংকটের কারণে নিয়মিত স্কুলে আসতে পারত না।’ 

অর্জুনদের বসতবাড়ির জায়গা ছাড়া কোনো জমি না থাকার কথা জানান পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পলাশ কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় কোনো ভাতা না আসায় তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারিনি। সামনে সহযোগিতার চেষ্টা করব।’ 

দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা পেশায় কর্মকার পরিবার, তারা দুই ভাই দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাদের। যার ফলে স্কুলেও উপস্থিতি ছিল কম। তাদের আর্থিক সংকটের কারণে স্কুল থেকে পরীক্ষার ফরমসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে। তারা লেখাপড়ায় খুবই ভালো।’ 

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম আওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই ভাইয়ের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা এলে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত