Ajker Patrika

টিসিবির কার্ড দিয়ে টাকা আদায়

আব্দুর রহিম পায়েল ও শিপুল ইসলাম (রংপুর) 
টিসিবির কার্ড দিয়ে টাকা আদায়

ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিতরণের জন্য সরকার পরিবার পরিচিতি কার্ড দিয়েছে। কিন্তু রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এই কার্ডের বিনিময়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি কার্ডের বিপরীতে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে উপকারভোগীরা গঙ্গাচড়া উপজেলা নিবাহী র্কমকর্তা (ইউএনও) বরাবর এ অভিযোগ করেছেন। 

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য প্রায় ২৫ হাজার উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়। ওই ৯ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা এই তালিকা তৈরি করেছেন। ওই তালিকার বিপরীতে ইউএনওর কার্যালয় থেকে পরিবার পরিচিতি কার্ড জনপ্রতিনিধিদের সরবরাহ করা হয়। উপকারভোগীরা সেই কার্ড সংগ্রহ করে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য ডিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কোলকোন্দ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ওই কার্ড উপকারভোগীদের দেওয়ার সময় টাকা আদায় করেছেন। 

সরেজমিনে গতকাল সোমবার উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের পীরেরহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়,২য় দিনের মতো টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সেখানে অব্যবস্থাপনা চিত্র দেখা যায়। রোদে দাঁড়িয়ে লোকজন ঠেলাঠেলি করে পণ্য কিনছেন। 

এ সময় মাস্টারপাড়া গ্রামের শান্তনা রানীর অভিযোগ করে বলেন, ‘হামরা কি কার্ড মাংনায় পাছি। কার্ড নেওয়ার সময় তো মেম্বারোক আড়াই’শ টাকা দিছি। এখন ফির ঠেলাঠেলি করি মাল নিবার নাগোছে। গরিবের ভালো একটেও নাই।’ 

শান্তনা রানীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে দক্ষিণ কোলকোন্দ পূর্বপাড়া গ্রামের গোলাপী বেগম বলেন, ‘মোরওটে হামার এলাকার মিজান মেম্বার কার্ড দিবার সময় উন্নয়নের করবে কয়া ২০০ টাকা নিছে। টাকা ছাড়া কার্ড দিবার চায়ে না। ওই জন্যে বাধ্য হয়া ২০০ টাকা দিয়া কার্ড নিছুন।’ 

দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের বাবু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা ছাড়া তো মেম্বারেরা কার্ড দেয় না। কার্ড নিবার গেইলে কয় সবায় দিছে মোকও দিবার নাগবে, না হইলে কার্ড দিবার নেয়। ওই জন্যে ২০০ টাকা দিয়া কার্ড নিছুন।’ 

রিতা রানী, ফরিদুল ইসলাম, বিষ্ণ কুমার বর্মণসহ অন্তত ২০ জন অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা ২০০ টাকা চৌকিদারী ট্যাক্স ও ৫০ টাকা নাস্তা খাওয়ার জন্য আদায় করেছেন। কিন্তু তাদের কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি। একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাঁরা টাকা দিয়েছেন। যারা টাকা দিতে রাজী হয়নি তাদের কার্ড সরবরাহের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। টাকা না দেওয়ায় অনেককেই র্কাড দেওয়া হয়নি। 

পীরেরহাট বাজারের টিসিবির পণ্য বিক্রির দেখভালের দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শারাবান তহুরা বলেন, ‘কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে টাকা নেওয়ার বিষয়টি পণ্য নিতে আসা লোকজন আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।’ 

কোলকোন্দ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়নের সব ওয়ার্ডের মেম্বারেরা কার্ড দিয়ে টাকা নিয়েছে। তাই আমিও নিয়েছি।’ 

কার্ড দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ‘কার্ড দিয়ে চৌকিদারী ট্যাক্স নিতে আমি বলেছি। তবে কার্ড দিয়ে টাকা নেওয়াটা অবৈধ হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও এরশাদ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কার্ড দিয়ে টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। টাকা নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত