Ajker Patrika

দিনাজপুরে সেই ট্রাকে চালকের আসনে ছিলেন সহকারী, ভ্যানকে চাপা দিয়ে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ

দিনাজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১৮: ৪১
দিনাজপুরে সেই ট্রাকে চালকের আসনে ছিলেন সহকারী, ভ্যানকে চাপা দিয়ে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ

দিনাজপুরে সেই আমবোঝাই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী। বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের আগে ট্রাকটি আরেকটি ধানবোঝাই ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। পরে দ্রুতগতিতে পালাতে গিয়ে নাবিল পরিবহনের নাইট কোচের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় ট্রাকটির। এতে ভ্যানের এক আরোহী, ট্রাকচালকসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৮ জন। তাঁরা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন—ট্রাকচালক নুর মোহাম্মদ হাসু মিয়া (৪০)। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মিত্রপাটি গ্রামের সুরা ইসলামের ছেলে। যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার মিলরোড এলাকার লক্ষ্মণ বাহাদুরের ছেলে রাজেশ বাহাদুর (৩০)। বাসচালকের সহকারী ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দানেশ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫০)। 

যাত্রীদের মধ্যে মারা গেছেন—দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার খোচনা গ্রামের মোমিনুল ইসলামের মেয়ে সায়মা মেহনাজ (৫), বোচাগঞ্জ উপজেলার জাহিদ হাসানের মেয়ে বিভা আক্তার (১০) এবং ধানবোঝাই ভ্যানে থাকা দিনাজপুর সদর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের স্বদেশ রায় (২৩)। 

দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন। 

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নাবিল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় যাচ্ছিল। আর আমবোঝাই ট্রাকটি গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ এলাকা থেকে চট্টগ্রামের কুমিরা এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছিল। কিন্তু ট্রাকচালক হাসু মিয়া তিনি নিজে গাড়ি না চালিয়ে চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁরই সহকারী কাওসার। 

আজ ভোর ৬টার দিকে ট্রাকটি দিনাজপুর সদরের পাঁচবাড়ী বাজার এলাকায় এলে একটি ধানবোঝাই ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এতে ভ্যানে ধানের বস্তার ওপরে বসে থাকা স্বদেশ রায় ছিটকে রাস্তায় পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ভয় পেয়ে ট্রাক চালকের সহকারী এবার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। ট্রাকটি চকরামপুর এলাকায় পৌঁছালে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা ওই যাত্রীবাহী বাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। 

এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকচালক নুর মোহাম্মদ হাসু মিয়া ও যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার রাজেশ বাহাদুর নিহত হন। পরে আরও তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২৮ জন। 

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকচালকের আসনে কাউকে পাননি। তবে বাম পাশ থেকে চালকের লাশ উদ্ধারের সময় সহকারী ট্রাক চালাচ্ছিলেন বলে বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে আহতদের উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট ঘুরে দেখা যায়, আহতরা হাসপাতালের মেঝেতে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। কারও মাথায়, কারও হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ। স্বজনেরা কাঁদছেন, কেউবা আহাজারি করছেন। 

খবর পেয়ে আহত ও নিহতদের দেখতে যান দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ও পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ। এ সময় তারা নিহত ও আহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন ও নিহতের স্বজনদের পঁচিশ হাজার ও আহতদের চিকিৎসার জন্য পাঁচ হাজার করে অর্থ সহায়তা দেন। 

ঘটনার সময় ভোরবেলায় হওয়ায় রাস্তা ছিল জনশূন্য। এ সময় সড়কের পাশে দোকানে শুয়েছিল কর্মচারী দুলাল মিয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দোকানে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করেই তীব্র শব্দ শুনতে পাই। বের হয়ে দেখি সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যায়। পরে পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।’ 

এম আব্দুর রহিম মেডিকেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. দ্বিজেন চন্দ্র বর্মণ জানান, ‘আহতদের মধ্যে কেউ মাথায়, কেউ হাতে, কেউবা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে বর্তমানে সবাই আশঙ্কামুক্ত।’ 

দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত