Ajker Patrika

এক্স সিরামিক লিমিটেড

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

  • শ্রীপুরের লবলঙ্গ নদ দখল ও দূষণের অভিযোগ রয়েছে এই কারখানার বিরুদ্ধে।
  • পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, নদী দখল ও দূষণের বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে তারা।
  • পরিবেশবাদীদের প্রশ্ন, দূষণকারী এমন কারখানা কীভাবে এই সম্মাননা পায়।
রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর
এক্স সিরামিকস লিমিটেডের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে লবলঙ্গতীরে। এরপর এই নদ দূষণ ও দখল করেছে তারা। পরিবেশ অধিদপ্তর এমন প্রমাণও পেয়েছে। এরপরও কারখানাটি জিতেছে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
এক্স সিরামিকস লিমিটেডের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে লবলঙ্গতীরে। এরপর এই নদ দূষণ ও দখল করেছে তারা। পরিবেশ অধিদপ্তর এমন প্রমাণও পেয়েছে। এরপরও কারখানাটি জিতেছে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিবেশবান্ধব উৎপাদন কার্যক্রম ও টেকসই শিল্প ব্যবস্থাপনার জন্য দেওয়া হয় ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’। গাজীপুরের শ্রীপুরের এক্স সিরামিকস লিমিটেডের কারখানা কর্তৃপক্ষ পেয়েছে এ সম্মাননা। তবে শ্রীপুরে লবলঙ্গ নদ দখল ও দূষণের প্রথম সারিতে রয়েছে এই কারখানা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।

২৪ জুন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ দেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এবার যেসব প্রতিষ্ঠান এই সম্মাননা পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এক্স সিরামিকস রয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা গ্রামে ২০০৯ সালে ৭৫ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে এক্স সিরামিকস কারখানা। কারখানাটি নির্মাণের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী লবলঙ্গ নদকে সামান্য ছাড় দিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি গিলে খেতে শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে লবলঙ্গকে ভরাট করে নালায় পরিণত করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেমতো গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এর কয়েকটি পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ব্রিজ। কারখানার ভেতর লবলঙ্গের ওপর কালভার্ট নির্মাণ করে দুই পাড়কে যুক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। গতিপথ যত্রতত্র পরিবর্তন করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কারখানার সব তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেখানে। এক্স সিরামিক কারখানার আগ্রাসনের ফলে লবলঙ্গের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।

এক্স সিরামিকস কারখানা কর্তৃপক্ষের এমন ভূমিকায় শঙ্কিত পরিবেশ সংগঠনের কর্মীরা। রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আসলে দোষ কাকে দেবেন? আশ্চর্য ও হতবাক হয়েছি। যে কারখানা আমাদের প্রাণের নদ লবলঙ্গকে গিলে ফেলেছে, তাকে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা! সরকারের পরিবেশবান্ধব শিল্প উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সিরামিক কারখানা ২০২৫ সালের গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিবেশসচেতন প্রযুক্তি, টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া ও সবুজ শিল্প ব্যবস্থাপনার জন্য এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। শাবাশ শ্রম মন্ত্রণালয়! আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের এই অ্যাওয়ার্ড কমিটির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, এক্স সিরামিকস গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে! তারপর? এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জবাব চাই, কারা ছিল এই পুরস্কার কমিটিতে? তিনি আরও লিখেছেন, যে ফ্যাক্টরির জন্য হাজার হাজার বিঘা জমি চাষের অনুপযোগী, যাদের জন্য একটি এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি হুমকির মুখে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, সেই ফ্যাক্টরি পেল গ্রিন অ্যাওয়ার্ড!

রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম লিখেছেন, এক্স সিরামিকসে একাধিকবার গিয়েছিলাম। তৎকালীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার, সর্বশেষ মোহাম্মদ কায়সার খসরু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকও (রাজস্ব ও এলএ) গিয়েছিলেন। কারখানার ভেতরে-বাইরে গ্রিন বলে কিছু চোখে পড়েনি। তবে এ কারখানা লবলঙ্গ দূষণ ও দখলকারী, এটা ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।...যখন দেখলাম, সেই কারখানা এ বছর গ্রিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, তখন আশ্চর্য হলাম। সঙ্গে সঙ্গে হতাশাও বেড়ে গেল। এরপর যদি কিছু করার থাকে, তবে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দিলাম।’

এ বিষয়ে জানতে এক্স সিরামিকস কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা শামীম শেখকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আরেফিন বাদল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরপরই পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধিদল এক্স সিরামিকস কারখানা পরিদর্শন করে। সেখানে নদী দখল-দূষণের বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে। সে অনুযায়ী পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হবে। এক্স সিরামিকস কারখানার ছাড়পত্রের আবেদন রয়েছে। সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে। একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত