Ajker Patrika

তিস্তা নদী

শক দিয়ে মাছ শিকার জলজ প্রাণীর ক্ষতি

  • ব্যাটারিচালিত মেশিন দিয়ে রাতে মাছ শিকার করছেন অসাধু ব্যক্তিরা।
  • এতে পোনা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা যাচ্ছে।
মাসুদ পারভেজ রুবেল  ডিমলা (নীলফামারী) 
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৩: ০৩
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীতে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীতে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। ব্যাটারিচালিত মেশিনের সাহায্যে রাতে অসাধু ব্যক্তিরা নদীর বিভিন্ন অংশে মাছ শিকার করছেন। এতে মাছের পোনা, ডিমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা যাচ্ছে।

জেলেদের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার, কালীগঞ্জ, ঝাড়সিংহেশ্বর, কিসামতের চর, চরখড়িবাড়ি বাইশপুকুর এলাকায় তিস্তা নদীতে রাতের আঁধারে কিছু অসাধু ব্যক্তি বৈদ্যুতিক শক মেশিন দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করেন। এ পদ্ধতিতে জেলেরা নৌকায় অটোরিকশায় ব্যবহৃত ব্যাটারি সঙ্গে নেন। সেই ব্যাটারির সঙ্গে একটি ইনভার্টার (ব্যাটারির বৈদ্যুতিক শক্তি কমবেশি করার যন্ত্র) যুক্ত করা হয়। সেই ইনভার্টার থেকে দুটি তার বের করে একটি পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। অপর তারটি একটি জালির সঙ্গে যুক্ত থাকে। বিদ্যুতায়িত ওই জালি যখন নদীর পানিতে ফেলা হয় তখন জালির ১০-১৫ ফুট দূরত্বের মধ্যে থাকা মাছগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠা মাছগুলো পরে জালি দিয়ে নৌকায় তোলা হয়। এ পদ্ধতিতে মাছ শিকারে অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা পড়ে।

নদীর আশপাশের বাসিন্দারা জানান, নিষিদ্ধ চায়না জাল এবং রিং জাল ব্যবহারে নদীতে এমনিতেই মাছ পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে বৈদ্যুতিক শক মেশিনে মাছ শিকার করায় মাছের পোনা, ডিমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মাছের সংকট দেখা দেবে।

বাইশপুকুর চর এলাকার জেলে বিষ্ণু ও দয়াল বলেন, নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। জেলেরা সারা দিন বসে থাকেন জাল নিয়ে। মেশিন দিয়ে ছোট বড় মাছগুলো মেরে ফেলা হচ্ছে। যার ফলে মাছের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। একজন জেলে সারা দিনে ৫০০ টাকার মাছও পান না। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।

তিস্তা নদীর প্রবেশমুখ কালীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা হলেই নদীতে ৮-১০টি নৌকায় বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ নিধন করা হচ্ছে। একটি অসাধু চক্র সহজে বেশি মাছ শিকারের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে। চক্রের সদস্যরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পুলিশি হয়রানিও করা হয়েছে।

ডিমলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামীমা আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি রাতে নদী-জলাশয়ে নিষিদ্ধ জাল ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকার করছেন। চেষ্টা করেও তাঁদের আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘বৈদ্যুতিক ফাঁদ দিয়ে নদীতে মাছ শিকারের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত