Ajker Patrika

তারাগঞ্জে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ২০
তারাগঞ্জে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন অভিভাবকও শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এবং পরে আবার বেলা ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত তাঁরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা।

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার দুই পক্ষকে নিয়ে বসব। সেখানে বিষয়টি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত হবে।’

জানা গেছে, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ২১ জন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পরিবারের সদস্যই সাতজন। অভিযোগ উঠেছে, আধিপত্য বিস্তারের জন্য গোপনে প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমান নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্ত্রী, ভাই, ভাতিজা, ভাতিজা বউকে চাকরি পাইয়ে দেন। এরপর গড়ে তোলেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য।

রংপুর শহরে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বাড়ি, গ্রামে করেছেন কোটি টাকার জমি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হন অভিভাবক ও  শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের লোকজন।

গত বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান কেন ইউএনওকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এরপর আজ রোববার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের বড়গোলা এলাকায় ঘনিরাপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৬ সালে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আলিয়ার রহমান। এরপর তাঁর বড় ভাই মফিজাল রহমানকে কৌশলে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি করেন।

বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ২১ জন। এর মধ্যে সাতজনই প্রধান শিক্ষকের স্বজন।

বড়গোলা গ্রামের অভিভাবক মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমান ও সভাপতি মফিজাল মিলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গোপনে ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজা বউকে নিয়োগ পাইয়ে দেন।

২০০০ সালে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী আলেয়া বেগম সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৪ সালে ভাতিজা আজম আলী, ২০১৬ সালে ভাতিজার স্ত্রী মোরশেদা বেগমকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।

এরপর ২০২২ সালে আরেক ভাতিজা আজমির সরকারকে পিয়ন ও ভাতিজার স্ত্রীকে মালি পদে নিয়োগ দেন। ২০২৩ সালে প্রধান শিক্ষক তাঁর আরেক ভাজিতাকে ঝাড়ুদার পদে নিয়োগ দেন।

অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা অভিযোগ করেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পরিবারের শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যাপারে কেউ কথা বলতে পারেন না। অন্য শিক্ষকেরাও ভয়ে থাকেন। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম করেন। কেউ কিছু বললে হুমকি–ধমকি দেন।

Rangpur-2শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসে ৫০ টাকা, বই বিতরণে রসিদ ছাড়াই ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতিটি পরীক্ষার ফি বাবদ ৬০০-৮০০, এসএসসি পরীক্ষার নিবন্ধনের নামে ৮০০ টাকা, ফরম পূরণের সময় বোর্ড ফির চার গুণ অতিরিক্ত টাকা, নম্বরপত্র উত্তোলনে ৩০০ টাক, প্রশংসাপত্রের জন্য ৪০০ এবং সনদ উত্তোলন বাবদ ৪০০ টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করেন প্রধান শিক্ষক।

এগুলোর কোনো রসিদ দেন না। এভাবে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গত কয়েক বছরে টাকা আদায় করে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন। রংপুর শহরে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষক আলিয়ার রহমান বলেন, ‘ভাই নিজের জমি–জায়গা দিয়ে অনেক কষ্টে এই বিদ্যালয় আমার ভাইসহ প্রতিষ্ঠা করেছি। নিয়ম অনুযায়ী আমার ভাই মফিজাল রহমান সভাপতি হয়েছেন। বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একটি মহল প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্টের জন্য শিক্ষার্থীদের দিয়ে এসব করাচ্ছে।’

অভিভাবক নাজির উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক তাঁর ইচ্ছামতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। সব বিদ্যালয় থেকে এখানে লেখাপড়ার খরচ অনেক বেশি। তাঁদের দাপটে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। বিদ্যালয়ের অর্থ প্রধান শিক্ষকের পুরো পরিবার লুটপাট করে খেয়েছেন।

ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘স্কুলে কোনো কাগজ স্বাক্ষর করতে গেলেও টাকা লাগে। কিছু বললে হেড স্যার টিসি দেওয়ার হুমকি দেন। উনার স্ত্রী, ভাতিজারাও ভয় দেখান। এ জন্য স্যারের পদত্যাগের দাবিতে আমরা সড়কে দাঁড়াইছি। পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়ব না।’

তারাগঞ্জের ইউএনও রুবেল রানা বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পরই ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত