Ajker Patrika

নাটোরে শিমুলের কাছে অসহায় দুই সাংসদ

নাইমুর রহমান, নাটোর
নাটোরে শিমুলের কাছে  অসহায় দুই সাংসদ

নাটোরের রাজনীতিতে একক আধিপত্য সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের। শিমুলের বিরোধিতার কারণে সাত বছর ধরে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আবদুল কুদ্দুস। তিনি নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। আর জীবনের শঙ্কা প্রকাশ করে সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগের কথা ভাবছেন সংরক্ষিত নারী সাংসদ রত্না আহমেদ। ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ করেন তাঁরা।

নাটোরের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নাটোরের রাজনীতিতে সাংসদ শিমুলই সব নিয়ন্ত্রণ করছেন। নিজের ইচ্ছেয় ইউনিয়ন ও পৌর কমিটি দিচ্ছেন। সেখানে দলীয় সভাপতির কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তাঁর হুমকির কারণে জেলা শহরে বাসা ভাড়া করেও থাকতে পারেননি জেলা সভাপতি আবদুল কুদ্দুস। হুমকির কারণে বাড়িওয়ালা ভাড়ার টাকা পর্যন্ত ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে জেলার নেতা ও সাংসদেরা দলীয় হাইকমান্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জেলা সভাপতির বক্তব্যে তাঁর নাম আসেনি। আর এ রকম কিছু ঘটে থাকলে সভাপতি তাঁকে জানাতে পারতেন। সেটা না করে সভাপতি কাকে খুশি করার জন্য এসব বলছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘একজন বর্ষীয়ান নেতাকে যখন কেঁদে কেঁদে নিজের কষ্টের কথা জানাতে হয়, তখন এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। তাঁদের মতো আমিও বারবার সেই একই ব্যক্তি কর্তৃক বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। এখন তিনি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও ক্যাডার দ্বারা বাধা সৃষ্টি করেন। দলের মূল সংগঠনের অঙ্গসংগঠন হয়েও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে রাস্তার ধারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বানিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়, এই হলো বাস্তবতা।’

সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘নাটোরের রাজনীতি এক ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর একক আধিপত্যে উপজেলা পর্যায়ে দল নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। দলে গতি ফেরানোর বদলে বিভাজন উৎসাহিত করছেন শফিকুল ইসলাম শিমুল। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই।’

আওয়ামী লীগের নেতারাই বলছেন, নামেই জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। কিন্তু বাস্তবে এটা হলো সাংসদ শিমুলের কার্যালয়। তাঁর সমর্থক ছাড়া কেউ এখানে প্রবেশ করতে পারেন না। দেখে মনে হয় নাটোরে শিমুলের রাজত্ব চলছে। যাঁরাই তাঁর বিরোধিতা করছেন তাঁদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছেন কিংবা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

২৭ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বলেন, ‘আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর সব সময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে থাকতে নাটোরে বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু বাসার মালিককে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে আমাকে বিতাড়িত করতে হুমকি দেওয়া হয়। বাসার মালিক আমাকে বলেন, আমাদের জীবন আগে। তখন আমি বাসা ভাড়ার জামানতের টাকা ফেরত নিই। আমাকে নাটোরে একটি অফিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি সেই অফিসে ঢুকতে পারিনি। মাঝেমধ্যে আমি নাটোরে অফিসে যেতাম।’

জীবন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ বলেন, ‘হয়তো আমারও জীবন চলে যেতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। আমার স্বামী বেঁচে থাকতে কোনো দিন আমার বাড়িতে চোর ঢোকার সাহস পায়নি। অথচ সংসদ সদস্য হিসেবে আমি যেদিন সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছি, সেই রাতে আমার বাড়িতে দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে বিছানায় হাঁসুয়া রেখে যাওয়ার দুঃসাহস দেখায়।’

সাংসদ রত্না বলেন, ‘একজন সাংসদ হওয়া যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে আমি রিজাইন দিতে চাই। আমার সাংসদ থাকার দরকার নাই। আমি জনগণের কাছে যেতে পারি না। বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয় স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের নাম করে। আমি এর প্রতিকার চাই। দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে।’

আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ওখানে সবাইকে নিয়ে আগে মিটিং করেছিলাম। দলীয় সাধারণ সম্পাদক ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণও করেছিলেন। নাটোরের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। যদি কোনো সংকট থাকে, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, তা আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানাতে পারেন। আমরা তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত