Ajker Patrika

পদ্মার ২০ জায়গায় রাতভর বালু লুট

  • আ.লীগ নেতা-কর্মীদের আত্মগোপনে যাওয়ার পর বিএনপি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে অভিযোগ।
  • সন্ধ্যা থেকে সারা রাত খননযন্ত্র দিয়ে বালু লুট।
শাহিন রহমান, পাবনা
পদ্ম নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পদ্ম নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনের বেলায় খুব একটা দেখা না গেলেও, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেই সরব হয়ে ওঠে পদ্মার চর। পাবনার অন্তত ২০টি পয়েন্টে সারা রাত অবৈধভাবে বালু লুট চলে উৎসবমুখরভাবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে আওয়ামী লীগের লোকজন অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করে দিতেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অবৈধ বালুমহালগুলো বিএনপির লোকজন দখলে নিয়েছেন।

দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা তো বহুদিন ধরেই চলে আসছে। এখন হয়তো লোকালি (স্থানীয়ভাবে) ওরা (নেতা-কর্মীরা) করে, কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তো হচ্ছে না। এ বিষয়ে এত ব্যস্ত হওয়ার কী আছে?’

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনার চারটি উপজেলায় পদ্মা নদীর অন্তত ২০টি স্থানে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলা হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর ভবানীপুর, দোগাছী ইউনিয়নের চর বলরামপুর, ভাঁড়ারা ইউনিয়নের দড়ি ভাউডাঙ্গি, চরতারাপুর ইউনিয়নের দীঘি গোয়াইলবাড়ি, শুকচর; সুজানগর উপজেলার চর ভবানীপুর, বরখাপুর, উদয়পুর, হাট মালিফা, নাজিরগঞ্জ, সাগরকান্দি; বেড়া উপজেলার ঢালারচর, নগরবাড়ি, চাকলা এবং ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ও লক্ষ্মীকুণ্ডা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সম্প্রতি কিছুদিন বালু তোলা বন্ধ ছিল। তবে এক সপ্তাহ ধরে আবারও বালু লুট শুরু হয়েছে। কৌশল পাল্টিয়ে এখন দিনের বদলে রাতে তোলা হচ্ছে বালু। আগে এসব বালুমহাল নিয়ন্ত্রণে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ৫ আগস্টে তাঁরা আত্মগোপনে যাওয়ার পর এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রচ্ছায়ায় অবাধে বালু লুট হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিন একেকটি পয়েন্টে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার পর্যন্ত বালু বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার বালু বিক্রি হয়। এই টাকার একটি অংশ চলে যায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্নজনের পকেটে।

পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে কি বালু তোলা হয়নি? তখন কি সাংবাদিকেরা নিউজ করেছেন? তখন কোথায় ছিলেন তাঁরা? তারপরও এগুলো তো প্রশাসন দেখে। আমরা হয়তো ওইভাবে দেখি না বা (দেখভাল) করিও না।’

পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পদ্মার চর থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির বিষয়টি শুনেছি। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বলে দিয়েছি। তাঁরা ইতিমধ্যে কয়েকটি মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনা করেছেন। এই মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।’

‘অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির টাকার ভাগ প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটেও যায়’, স্থানীয় বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান বলেন, ‘এটা তো লোকজনের বক্তব্য। আপনাদের এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও নৌ পুলিশকে ধরতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত