Ajker Patrika

‘রোদে কাম করতি আইসি মনে হচ্ছে গা পুড়ি যাচ্চে, তবুও উপায় নেই’

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
‘রোদে কাম করতি আইসি মনে হচ্ছে গা পুড়ি যাচ্চে, তবুও উপায় নেই’

পাবনার ঈশ্বরদীতে আজ বুধবার এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার ছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ গতকালের তুলনায় আজ প্রায় ১ ডিগ্রি বেশি। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই শ্রমজীবী মানুষদের কাজ থেমে নেই। তাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা। 

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, বিরাজমান তাপমাত্রা আরও প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে আকাশে মেঘের উপস্থিতি খুবই কম থাকায়। 

ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই তাপমাত্রা হালকা, মাঝারি ও তীব্র হচ্ছে। প্রতিদিনই ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এর মধ্যে তীব্র গরম উপেক্ষা করে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষেরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। 

তীব্র গরমের কারণে ঈশ্বরদীসহ আশপাশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একান্ত খেটে খাওয়া মানুষগুলো মাঠে কাজ করলেও সাধারণ মানুষেরা খুব একটা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। 
 
ঈশ্বরদীতে আজ ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেও উপজেলা সড়কে নির্মাণকাজে এসেছেন পাকশীর বাঘইল গ্রামের রাজমিস্ত্রি দুলাল হোসেনসহ কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক। তীব্র গরমের মধ্যেও তাঁদের বিরামহীন কাজ করতে দেখা যায়। 

এ সময় রাজমিস্ত্রি দুলাল হোসেন বলেন, ‘কি যে গরম পড়িছে খোদা, ভাষায় বুঝাতি পারব না। মনে হচ্ছে জানডা বাইর হয়ি যাচ্ছে। রোদে কাম করতি আইসি মনে হচ্ছে গা পুড়ি যাচ্চে। তবুও উপায় নেই বাবা। রোদবৃষ্টির ভয়ে কাজ বন্ধ রাখার উপায়নি। আমারে কাম করতিই হবি।’ 

উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর এলাকার কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘তীব্র রোদের দাপটে মাঠে তো দুপুরে কাজ করতে পরছি না। এ জন্য ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের কাজ সারছি। রোদের তাপ বাড়ার আগেই আবার বাড়ি ফিরে আসি। এতে ফসলের যত্ন নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে।’ 

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাস জুড়েই গরমের তীব্রতা রয়েছে। তবে এপ্রিলের ১২ তারিখ থেকে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করছে ও তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত ১২ এপ্রিলে ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ১৩ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ১৪ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি, ১৫ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ১৬ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং আজ বুধবার ১৭ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। 

তীব্র তাপপ্রবাহে কাজ থেমে নেই শ্রমজীবী মানুষের। ছবি: আজকের পত্রিকা ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে কর্মরত সহকারী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক নাজমুল হক আজকের পত্রিকাকে জানান, বর্তমানে ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। তীব্র তাপের কারণে সূর্যের আলো তির্যকভাবে শরীরে অনুভূত হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে আকাশে মেঘের উপস্থিতি খুবই কম এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ঈশ্বরদীর প্রকৃতিতে তীব্র তাপ অনুভূত হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা ঈশ্বরদীর এ বছরের উল্লেখযোগ্য তাপমাত্রা, যা এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। গত বছর ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত