Ajker Patrika

দুটি খাসপুকুর গিলছেন তিন ভাই

  • পুকুর দুটি তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে মৎস্যজীবী সমিতিকে
  • দুই পুকুরের মাঝের জমির মালিক তিন ভাই মিলে তা ভরাট করছেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
Thumbnail image
সরকারি পুকুরপাড়ে মাটি ফেলে এভাবেই নিজেদের জমির পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাতরা পুকুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি একটি পুকুরের নাম চাতরাপুকুর। এর নামেই গ্রামের নামকরণ। অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি খাসপুকুরের নাম তেতোসাল্লা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এই দুটি সরকারি পুকুরই তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে। তবে দুই পুকুরের মাঝের জমির মালিক তিন ভাই মিলে পুকুর দুটি ভরাট করে চলেছেন।

দুই পুকুরের মাঝের জমির মালিক আপন তিন ভাই—হাবিল হোসেন, কাবিল হোসেন ও মজিবর রহমান। তাঁরা ধীরে ধীরে পুকুরপাড়ে মাটি ফেলে নিজেদের জমির পরিধি বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ লিজগ্রহীতা ও মৎস্যজীবীদের। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের।

পুকুর দুটি গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর পারুলিয়া মৌজার ১ নম্বর খাসখতিয়ানভুক্ত। ৩৮৬ নম্বর দাগে একটি পুকুরের আয়তন ১ দশমিক ৪৯ একর। আর ৩৯১ দাগে আরেকটি পুকুরের আয়তন শূন্য দশমিক ৬১ একর।

চাতরাপুকুর গ্রামের ওই পুকুর দুটি মৎস্যজীবী সমিতির কাছ থেকে নিয়ে মাছ চাষ করছেন আবদুস সামাদ নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা বলছেন, সারেংপুর গ্রামের কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি তিন ভাইয়ের হয়ে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে পুকুর দুটি ভরাটের দায়িত্ব নিয়েছেন।

পুকুর দুটির মাছচাষি আবদুস সামাদ জানান, গত কয়েক দিনে চাতরাপুকুরের এক পাড়ের অন্তত ১০ ফুট করে জায়গায় মাটি ফেলা হয়েছে। আর তেতোসাল্লা পুকুরের তিনপাড় ভরাট করা হচ্ছে। সবদিকেই পুকুরের পানির মধ্যে প্রায় ১০ ফুট করে মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এভাবে পুকুর দুটি ভরাট করা হলে মাছ মারা যাবে। এতে তাঁর প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।

গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের দুই পাশে দুটি পুকুর। মাঝে তিন ভাইয়ের জমি। মাঝের জমিটির পরিধি বাড়াতে দুই পাশে দুটি পুকুরের পাড়েই মাটিভরাট করা হচ্ছে। ছোট পুকুরটির পূর্ব ও উত্তরপ্রান্তের পাড়েও মাটি ফেলা হচ্ছে।

মাছচাষি আবদুস সামাদ জানান, পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে দেখে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তিনি কয়েক দফা ফোন করেন। কিন্তু কর্মকর্তারা গুরুত্ব দেননি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তাঁর ভাই আবদুল মাতিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান। তারপরও কয়েক দিন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অবশেষে রোববার সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম একজন তহশিলদারকে পুকুর দুটি পরিদর্শনে পাঠান। কিন্তু তহশিলদার পুকুরের জমি পরিমাপ না করেই ফিরে যান। তিনি চলে যাওয়ার পরই ওই তিন ভাই বাঁশ কাটা শুরু করেন। পানিতে বাঁশ পুঁতে সেখানে মাটি ফেলা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিল হোসেন দাবি করেন, পাড় ভেঙে ধীরে ধীরে তাঁদের অনেক জমি পুকুরে নেমে গেছে। যে পরিমাণ জমি নেমেছে, এখনো পুরোটা ‘উদ্ধার’ করতে পারেননি। সে জন্য বাঁশ পুঁতেছেন। আরও ১০ ফুট পর্যন্ত পুকুরের পাড় তাঁরা দখল নিতে চান।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এক ইঞ্চি সরকারি জমিও তাঁরা দখল করতে পারবেন না। আমি তহশিলদারকে পাঠিয়েছিলাম। কী দেখেছেন সেটা এখনো জানি না। আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব। খাসপুকুরে মাটি ফেলা হলে মামলা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত