Ajker Patrika

শতবর্ষী নৌকার হাট

স্বপন মির্জা, সিরাজগঞ্জ
শতবর্ষী নৌকার হাট

চলছে বন্যা মৌসুম। যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। সমান তালে পানি বাড়ছে বড়াল, হুড়াসাগর, করতোয়া, গুমানী, আত্রাই নদীতেও। তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর, বেলকুচি, পাবনার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকার রাস্তাঘাট। চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলেও। এখন যাতায়াতে নৌকাই এসব এলাকার মানুষের ভরসা। তাই সময় এখন নৌকা কেনার।

বছরের এই সময়টিতে ওই অঞ্চলে নৌকার ব্যবহারের চল বেশ পুরোনো। মানুষের এই প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুরে প্রায় শত বছর ধরে বসছে নৌকার হাট। ‘কৈজুরী নৌকার হাট’ এখন শাহজাদপুরের ঐতিহ্য।

বন্যা মৌসুমে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার কৈজুরী বাজারের কৈজুরী মহিউল ইসলাম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে দিনভর নৌকা কেনাবেচা চলে এ হাটে। হাটের দিন সকালেই বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন তৈরি করা ছোট ছোট ডিঙি ও কোষা নৌকা যমুনার পাড়ের এই হাটে নিয়ে আসেন ব্যাপারীরা। নিজেদের তৈরি করা নৌকা নিয়ে আসেন কাঠমিস্ত্রিরা। বেলা যত বাড়তে থাকে, মানুষের ভিড়ও বাড়ে।

গত শুক্রবার হাটে নৌকা কিনতে আসেন ৮০ বছর বয়সী আবদুল আওয়াল। তিনি বলেন, ‘এ হাট খুব পুরোনো। যখন আমার বয়স আট-নয় বছর, তখন দাদার সঙ্গে এখানে নৌকা কিনতে এসেছি। তখন উৎসাহ আনন্দটা ছিল একেবারে ভিন্ন। বাড়ির ছয়-সাতজন এসেছিলাম নৌকা কিনতে। ১৫০ টাকা দিয়ে বড় নৌকা কিনে বইঠা দিয়ে বেয়ে বাড়ি গিয়েছি। দুধ দিয়ে নৌকা ধুয়ে তা বরণ করে নিয়েছেন বাড়ির বধূরা। এখন সে আমেজ নেই।’

কৈজুরী নৌকার হাটে নতুন নৌকাই বেশি। তবে পুরোনো নৌকাও কেউ কেউ বিক্রি করেন। নতুন-পুরোনো মিলে হাটে ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা দামের নৌকা ওঠে। এর মধ্যে কাঠের গুণগত মানের ক্ষেত্রে দাম কমবেশি হয়।

নৌকা বিক্রি করতে আসা শাহজাদপুর উপজেলার বেনুটিয়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি পঞ্চানন সূত্রধর জানান, ‘পৈতৃক সূত্রে নৌকা তৈরি ও বিক্রি পেশার সঙ্গে জড়িত ৪৫ বছর ধরে। আগে যে নৌকা শত টাকায় তৈরি করা যেত তা এখন ১৫-২০ হাজার টাকা লাগে। নৌকার সে চাহিদা আর নেই। মানুষ নৌকা কেনার পরিবর্তে একটি ভালো মোটরসাইকেল কেনে। যারা নৌকা কিনছে তারা শুধু নদী ও বন্যায় পারাপারের জন্য। আগে বিশাল কোষা, পানসি, খেলনা নৌকাবাইচ হতো। এখন তেমন নৌকাবাইচ হয় না। নৌকা তৈরিতে পাবনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের ডাক পড়ত। এখন তা নেই। নৌকার মিস্ত্রিদের কদর কমে গেছে।’

পঞ্চানন সূত্রধর আরও বলেন, ‘বাড়িতে বসে সপ্তাহজুড়ে কাজ করে দুটি ১২ হাতের ডিঙি নৌকা তৈরি করেছি। নৌকাপ্রতি খরচ হয়েছে ৬-৭ হাজার টাকা। হাটে এসে দাম চাচ্ছি ১১ হাজার টাকা। কিন্তু দাম বলছে ৭ হাজার টাকা। এ দামে বিক্রি করলে মজুরি উঠবে না।’ এদিকে, হাটে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, হাটে ইজারাদার খাজনা বেশি নিচ্ছে। ৫ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা কিনে ৫০০ টাকা খাজনা দিতে হয়, নেই রসিদ। খাজনা উত্তোলনকারী আব্দুল্লাহ সরকার জানান, তাঁরা কম টাকাই খাজনা নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত