Ajker Patrika

আলোকিত হলো বগুড়ার দুর্গম চরাঞ্চল

প্রতিনিধি, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) 
আলোকিত হলো বগুড়ার দুর্গম চরাঞ্চল

বগুড়া সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের ৫টি গ্রাম বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হয়েছে। এসব গ্রামগুলোর ৬০০ পরিবার পাবেন বিদ্যুৎ সুবিধা। গত শনিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে বিদ্যুৎ সরবরাহের শুভ উদ্বোধন করেন সারিয়াকান্দি-সোনাতলা আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান।  

গ্রামগুলো হলো, উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সুজাতপুর, খাটেবাড়ী, চরশরুলিয়া, শিমুলতাইড়, সুজনের পাড়া। গ্রামগুলোর প্রায় ২২ হাজার বাসিন্দারা পাচ্ছেন বিদ্যুতের সুবিধা। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী ৫টি গ্রামে রয়েছে ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীও পাবেন এ সুবিধি।  

কথা হয় সুজাতপুর চরের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার সামিয়ার সাথে। সে বলেছে, `আগে হামরা হারিকেনের আলোত পড়ালেখা করিচ্চিলেম। হারিকেনের আলোত পড়তে হামার একটুতেই ঘুম ধরছে। আবার হারিকেনের গন্ধও হামার সহ্য হচ্ছিল না। বইয়ের লেখাগুলো ভালো বোঝা যায় না। এখন হামার বাড়িত কারেন আচ্চে। কিযে খুশি হছি হামি। বইয়ের লেখা একন স্পষ্ট বুঝা যাচ্চে।' 

খাটেবাড়ী চরের আফজাল সরকার। তিনি গ্রামের মুরুব্বি। তিনি বলেন, `হামার জীবনে হামার বাড়িত বসে হামি কারেনের আলোত ভাত খামু এডে হামি কুনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি। হামার অন্ধকার বাড়ি একন আলো দিয়ে ফকফকে হয়া গেছে। হামাগিরে চরে কারেন দেওয়ার জন্য হামরা সরকারেক ধন্যবাদ জানাই।' 

চরশরুলিয়ার বৃদ্ধ সাদেক আকন্দ বলেন, 'কেরোসিন তেলের নিম্পু আর হারকিন বা মোমবাতি আছিল হামাগিরে রাতের একমাত্র অবলম্বন। পেটের ভাত জোগাড় করবের না পারলেও কেরোসিন তেল ঠিকই কিনা লাগছে। কখনো বাড়িতে কেরোসিন তেল না থাকলে জোসনার আলোতেই রাতের খাবার খাছি।' 

সুজনের পাড়া চরের আশরাফ আলী শেখ জানান, `মোবাইল এবং চার্জার লাইট চার্জ দেওয়ার জন্যে হামরা বলাইল বাজারত যাচ্চিলেম। অনেকক্ষণ বসে থাকে ফুলচার্জ দিয়ে তারপর বাড়িত আচ্চি। কখন আবার আগের দিন মোবাইল, লাইট চার্জত লাগিয়ে পরের দিন নিয়ে আচ্চি। চার্জ দেওয়ার জন্যে টাকাও দেওয়া নাগছে। একন হামার ঘরতই হামি চার্জ দিবের পাচ্চি। 

শিমুলতাইড় চরের মজিবর শেখ বলেন, `আগে হামরা সদরে যায়া সায়েবেগিরে মাতার উপর ফেন ঘোরা দেকে কতই না চায়া থাকছি। এনা বাতাস খাবার জন্যে বসে থাকছি। সারা জীবন গেল ফ্যান ছাড়া। কোনো কোনো রাতে গরমে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। একন হামার মাতার ওপরই ফ্যান ঘুরিচ্চে।' 

সুজাতপুরের আব্দুল খালেক গেন্দা সরকার বলেন, `সদরের বিভিন্ন চার স্টল বা দুকানত টিপি দেকার জন্যে বসে থাকছি। ছবি দেকা শেষ হলে তারপর বাড়িত আচ্চি। একন হামার বাড়ীতই টিপি চলিচ্চে। কারেন আনার জন্যে হামাগিরে চিয়েরমিনক হামরা ধন্যবাদ জানাই।' 

এ এলাকায় বিদ্যুৎ আসায় উপজেলার চরাঞ্চলগুলোর এই ৫ গ্রামে এখন শুরু হবে বিদ্যুৎ চালিত শেলো মেশিন। এতে চরগুলোর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। 

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, `আমার ইউনিয়নের কয়েক শ পরিবারের বিদ্যুৎ নিতে আবেদন এবং জামানত খরচ আমি নিজ থেকে বহন করেছি। গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হওয়ায় আমি সরকারকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।' 

ইউনিয়নটি সোনাতলা উপজেলার সীমানার কাছাকাছি হওয়ার সোনাতলা জোনাল অফিস হতে এ সংযোগ চালু করা হয়েছে।  

বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিত-২ এর সোনাতলা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নূরুল আমিন আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, চরাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে প্রকল্প চালু হয়েছে। এর আওতাধীন উপজেলার কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত