Ajker Patrika

পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি: পুলিশ

পাবনা প্রতিনিধি
পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি: পুলিশ

ছাত্রলীগের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

বুধবার (৫ এপ্রিল) রাতে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা এ কথা জানান। 

কৃপা সিন্ধু বালা জানান, আহত অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে তিন শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে আসার পর তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয়নি। 

ওসি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে তাঁদের এলাকা কুষ্টিয়ার মিরপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম ও পাবনার আটঘরিয়া থানার ওসির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাঁদের পারিবারিক অবস্থান ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। কিন্তু তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ছাত্রশিবির সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাঁদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো অভিযোগও নেই।’ 

কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা অন্য কেউ তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয়নি। তাই বুধবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে তিন শিক্ষার্থীকে তাঁদের পরিবারের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী গোলাম রহমান জয়কে ছাড়পত্র দেওয়ার পর অভিভাবক নিয়ে গেছে। তবে সব বিষয় নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। 

এর আগে ছাত্রশিবির সন্দেহে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর তাঁদের শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ ও পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁদের মারধর বা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁরা। গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলে ঘটনাটি ঘটে। 

ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শাখা ছাত্রলীগ ও পুলিশ কেউ দায় নিচ্ছে না। ছাত্রলীগ ও পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। আর পুলিশের দাবি, শিক্ষার্থীদের আহত অবস্থায়ই উদ্ধার করা হয়। 

নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা হলেন—লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের গোলাম রহমান জয় (২৫), ইংরেজি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের আসাদুল ইসলাম (২৩) ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল ই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক (২৩)। 

এদের মধ্যে আসাদুল ইসলাম ও আজিজুল হককে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। আর গোলাম রহমানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে পুলিশি পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে আসাদুলের বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ষাটগাছা গ্রামে। আজিজুল হকের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর গ্রামে। আর গোলাম রহমানের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুরে। 

আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজের পর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা ১০-১২ জন তাঁদের কাছে এসে দাঁড়ি, পাঞ্জাবি দেখে শিবির কিনা জানতে চান। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা তাঁদের ধরে হলে নিয়ে যায়। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তিনটি আলাদা কক্ষে নিয়ে স্ট্যাম্প, রড, হকিস্টিক, প্লাসসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন করে। হাতুড়ি, জিআই পাইপ, তালা দিয়েও মারধর করেন তাঁরা। নির্যাতনের একপর্যায়ে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি কাগজে লিখিত নিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। 

আসাদুল ইসলাম ও আজিজুল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দাঁড়ি-টুপি থাকায় আমাদের বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছিলেন। পরে আমাদের হলে নিয়ে গিয়ে তিন রুমে তিনজনকে নির্যাতন করা হয়। আমরা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের অপরাধ আমরা নামাজ-রোজা করি, দাঁড়ি-টুপি আছে। এ জন্য জোর করেই আমাদের শিবিরকর্মী বানিয়েছে।’ 

এ বিষয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন শিবিরকর্মী ক্যাম্পাসে গোপন বৈঠক করছিল। এ সময় তাঁদের আটক করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে আমরা তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তাঁদের কাছে বিভিন্ন রকম শিবিরের নোটবুক ছিল। কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’ 

শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেধড়ক মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী। ছবি: আজকের পত্রিকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘প্রক্টর ড. কামাল হোসেনের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। পরে ওই শিক্ষার্থীদের আটক অবস্থায় দেখি। তাঁদের কাছে থেকে শিবিরের রিপোর্ট বই, ব্যক্তিগত ডায়েরি এবং কিছু মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়। পুলিশের কাছে সোপর্দের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি।’ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার ফোন পেয়ে হলে এসে ওই শিক্ষার্থীদের দেখতে পাই। তাঁরা আমার হলের শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে। তাঁরা নিজেরা শিবির বলে স্বীকারোক্তি দিলে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এখানে ছাত্রলীগ মারধর করেছে কিনা জানি না।’ 

এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর নির্যাতিতরা যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজনৈতিক দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ, হেফাজতে সেনা কর্মকর্তা

পত্রিকায় নিবন্ধ লেখার পর বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাকে ফেরত নেওয়ার অনুরোধ কাতারের

পিআর পদ্ধতিতেই হবে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ মাতিয়ে যাওয়া জার্মান টিকটকার ভারতে আটক

শেখ হাসিনার ‘ফেরার পরিকল্পনা’ ঘিরে গোপন বৈঠক, গ্রেপ্তার ২২ নেতা-কর্মী কারাগারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত