Ajker Patrika

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে নারীদের ধান কাটার প্রতিযোগিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরে নবান্ন উৎসবে নারীদের ধান কাটা প্রতিযোগিতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরে নবান্ন উৎসবে নারীদের ধান কাটা প্রতিযোগিতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাঠভরা সোনালি ধানের ওপর ছড়িয়ে পড়ছে বিকেলের সূর্যের মিষ্টি আলো। ধানখেতের পাশে নারীদের কয়েকটি দল নতুন শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবার হাতে কাস্তে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার রেফারির মতো সামনে দাঁড়িয়ে বললেন—ওয়ান, টু, থ্রি। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো কিষানিদের ধান কাটার প্রতিযোগিতা। বেশ খানিকটা জমির আমন ধান মুহূর্তেই কাটা শেষ।

আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) পয়লা অগ্রহায়ণে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরে নবান্ন উৎসবে এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রাজশাহী শহরের মহিষবাথান এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান মনির এ গ্রামে জমি ইজারা নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করছেন। একাধিকবার জাতীয় কৃষি পদকও পেয়েছেন। তাঁর উদ্যোগেই সাত বছর ধরে গ্রামে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও এই আয়োজনে পুরো গ্রামের মানুষ অংশ নেন।

প্রথমেই গ্রামের শিশু-কিশোরীরা গাঁদা ফুল ছিটিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেয়। পরে জাতীয় সংগীতের পর শুরু হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের ধান কাটার প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় ওরিনা লাকড়ার দল। এবার প্রথম নয়, টানা পাঁচ বছর ধরেই প্রথম হচ্ছে তাঁর দল। আগে পাঁচজনের দল হতো। দুই বছর ধরে তিনজন করে। এবার ওরিনার সঙ্গে ছিলেন বিমলা বেগ ও স্বপ্না লাকড়া। প্রথম হয়ে তাঁরা বললেন, ‘ধান কাটতে কাটতে হাত চালু হয়ে গেছে। তাই আমরাই পাঁচ বছর ধরে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে আসছি।’

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এবারও গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পিঠাপুলি আর পায়েস রান্না করা হয়। এক মাস আগে থেকে গ্রামের কিশোরীরা নাচ অনুশীলন করে রাখে। বিকেলে ধান কাটার প্রতিযোগিতার পর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে কিশোরীরা নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য রাজশাহীর পবার বিলকিস বানু ও বগুড়ার সুরাইয়া ফারহানা রেশমাকে নবান্ন সম্মাননা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মেহেরুন নেসা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম। তাঁরা প্রায় হারাতে বসা এ নবান্ন উৎসব দেখে অভিভূত হন। এ ধরনের আয়োজন করার জন্য তাঁরা কৃষক মনিরুজ্জামানকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে মনিরুজ্জামান জানান, কর্মব্যস্ত প্রতিটা দিনের মাঝে একটা দিন সবাইকে একটু বিনোদন দিতেই এই আয়োজন। তিনি যত দিন এ গ্রামে থাকবেন, তত দিন আয়োজন করবেন এই উৎসব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ