Ajker Patrika

রামেক হাসপাতালে দরজা-লিফটে জালিয়াতি, গণপূর্ত উদাসীন

  • তিনটি স্মার্ট দরজার জায়গায় প্রথমে কাঠের, পরে কাচের দরজা লাগানো হয়েছে।
  • ‘এ’ গ্রেডের লিফট সরবরাহের কথা থাকলেও স্থাপন করা হয় ‘সি’ গ্রেডের লিফট।
  • ধরা পড়ার পর সেই লিফট খুলে নিয়ে গেলেও ‘এ’ গ্রেডের লিফট লাগাচ্ছেন না ঠিকাদার।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একটি ভবনের পঞ্চম তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছে। দরপত্রে আইসিইউর তিনটি স্মার্ট দরজা লাগানোর কথা ছিল। আর লিফটের বিষয়ে শর্ত ছিল, ‘এ’ গ্রেডের ফায়ার প্রোটেক্টেড বেড কাম প্যাসেঞ্জার লিফট লাগাতে হবে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাঠের দরজা আর ‘সি’ গ্রেডের প্যাসেঞ্জার লিফট লাগিয়েই কাজ সারতে চেয়েছিল। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ঠিকাদার কাঠের দরজা খুলে লাগিয়েছেন কাচের দরজা। আর লিফট খুলে নিয়ে গেলেও নতুন লিফট এখনো লাগাননি।

এই কাজের দায়িত্ব পেয়েছিল ঠিকাদার জাকির হোসেনের প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন। কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরজা ও লিফটে জালিয়াতি করে অর্ধ কোটি টাকার বেশি লাভ করতে চেয়েছিল। জাকির হোসেনকে হাসপাতালের কাজটি দিয়েছিল রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২। গণপূর্তের তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি। উল্টো সম্প্রতি তাঁর প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি কর্মকমিশনের রাজশাহী কার্যালয়ে ৬০ লাখ টাকার এসি এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহের কার্যাদেশ দিয়েছে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহম্মদ বলেন, ‘এত দিনেও লিফট কেন লাগানো হচ্ছে না, সেটা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। কেন বিলম্ব হচ্ছে তার ব্যাখ্যা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের দিতে পারছে না। আমি গণপূর্তের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে একসঙ্গে ডেকেছি। তাঁরা এলে আমি বিষয়গুলো বুঝতে পারব।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, রামেক হাসপাতালের নতুন আইসিইউ ইউনিটের দরজায় জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে গত এপ্রিলে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে কাঠের দরজা খুলে কাচের দরজা লাগিয়ে দেন ঠিকাদার। পরে লিফটে জালিয়াতি ধরা পড়লে তা খুলে নিয়ে যান তিনি। এই নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে গণপূর্ত বিভাগ। গত ৬ মে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী লিফট লাগানো হয়নি। চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের লিফট, সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ গ্রেডের। এই দুই লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। দরপত্রে চাওয়া হয়েছিল ফায়ার প্রোটেক্টেড লিফট, কিন্তু লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ লিফট। এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্তের নির্দেশে ঠিকাদার তাঁর লিফট খুলে নিয়ে যান।

এরপর ঠিকাদারকে দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত লিফট লাগাতে বলা হয়। ঠিকাদার লিফট আমদানি করতে একটি এলসি খুলেছেন। ১৪ হাজার ডলারের সেই এলসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৮ ডিসেম্বর। কিন্তু ঠিকাদার এখনো লিফট এনে লাগাননি। ফলে পাঁচতলার আইসিইউর মুমূর্ষু রোগী ও তাঁদের স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসেনকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাওসার সরকার বলেন, ‘আগের লিফট সরিয়ে নতুন লিফট আনতে ঠিকাদারের প্রায় ৬০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। কারণ, এখন ডলারের দাম বেড়ে গেছে। লিফটের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে লিফট আসবে। মার্চের শুরুতে লাগানো হবে।’

জালিয়াতি ধরা পড়লেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, ‘বিষয়গুলো সবাই জানেন। এখনো প্রতিষ্ঠানটিকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়নি। ফলে তারা দরপত্রপ্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

খেজুরে অতি মুনাফা, হতাশ ক্রেতা

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

কলাবাগানে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত