Ajker Patrika

ঘুরেফিরে একই সমিতিকে পুকুর ইজারার প্রক্রিয়া

  • লাভবান সিন্ডিকেট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষ বঞ্চিত
  • জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৫৯
ঘুরেফিরে একই সমিতিকে পুকুর ইজারার প্রক্রিয়া

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ঘুরেফিরে একই মৎস্যজীবী সমিতিকে সরকারি পুকুর ইজারা দেওয়া হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি সমিতি দুটি করে পুকুর ইজারা পাবে এবং তারপর অবশিষ্ট পুকুর খাস কালেকশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ইজারা দিতে হবে। কিন্তু গোদাগাড়ীর শক্তিশালী পুকুর সিন্ডিকেট সমিতির মাধ্যমে সব পুকুর নিয়ে নিচ্ছে। এতে জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।

উপজেলার পানিহার গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান গত সোমবার জেলা প্রশাসক বরাবর এই লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়েও দেওয়া হয়েছে। আজকের পত্রিকার হাতে অনুলিপির কপি এসেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকার ২০০৯ সালে জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও ২০১২ সালে সংশোধনী জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা গঠন করে ধারাবাহিকভাবে জলমহাল ইজারা দিতে রূপরেখা তৈরি করেছে। ২০০৯ সালের জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী, খাস পুকুর ইজারা গ্রহণের ক্ষেত্রে মৎস্যজীবী সমিতি অগ্রাধিকার পাবে। ২০১২ সালের সংশোধনী নীতিমালার ২(৪)(খ) ধারা অনুযায়ী ও (গ) ধারা মোতাবেক একরপ্রতি বার্ষিক ১ হাজার ৫০০ টাকায় দুটি করে পুকুর ইজারা পাবে। নীতিমালার ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গোরস্থান, আদর্শগ্রামের অনুকূলে ইজারাবিহীন পুকুর উন্মুক্ত রাখার বিধান রয়েছে। এরপর অবশিষ্ট যতই পুকুর থাকুক না কেন, তা নীতিমালার ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে খাস কালেকশন করতে হবে।

অভিযোগে বলা হয়, জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ৬(৫) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো সমবায় সমিতি দুটির বেশি জলমহাল ইজারা পাবে না। কিন্তু গোদাগাড়ী উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত এবং সদস্যসচিব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম তা অমান্য করছেন।

জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে ৫ হাজার ৩৮টি সরকারি পুকুর ও দিঘি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু খাস পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫৭টি। ১ হাজার ৪২১টি পুকুর আগের দুই বছরে ইজারা দেওয়া আছে। বাকি ২ হাজার ২৩৬টি পুকুর বাংলা ১৪৩২ থেকে ১৪৩৪ সনের জন্য ইজারা প্রক্রিয়ায় রয়েছে। গোদাগাড়ীতে সমবায় সমিতি রয়েছে ৪৮টি। নিয়ম অনুযায়ী, মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জন্য প্রতিটিতে সমিতিতে অন্তত ২০ জন জেলে কার্ডধারী মৎস্যজীবী থাকতে হবে। কিন্তু এসব সমিতির সবগুলোর তা নেই। তারপরও সব সমিতিই আগেই নীতিমালার বাইরে দুইয়ের বেশি সংখ্যক পুকুর ইজারা পেয়েছে। এখন ওই সমিতিগুলোর কাছেই শিডিউল বিক্রি করে পুকুর ইজারার জন্য দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।

কোন সমিতির নামে কোন পর্যায়ে কতটি পুকুর ইজারা নেওয়া আছে, তা তালিকার মাধ্যমে তফসিলসহ পুরো বিবরণ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগপত্রের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৪৮টি সমিতির মধ্যে ৩৮টিই দুই বা ততোধিক পুকুর ইজারা নিয়েছে। এর মধ্যে চারটি সমিতি ছয়টি করে পুকুর ইজারা নিয়ে আছে। নয়টি সমিতি ইজারা নিয়েছে পাঁচটি করে পুকুর। চারটি করে পুকুর ইজারা নিয়েছে ১২টি সমিতি। তিনটি করে পুকুর নিয়েছে পাঁচটি সমিতি। আটটি সমিতি নিয়েছে দুটি করে পুকুর। আর একটি করে পুকুর নিয়েছে দুটি সমিতি। এসব সমিতি ফের পুকুর ইজারা নিতে দরপত্র দাখিল করেছে।

গোদাগাড়ীর স্থানীয়রা জানান, গোদাগাড়ীর ৩ হাজার ৬৫৭টি পুকুরের মধ্যে দুটি করে মাত্র ৯৬টি পুকুর পায় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। বাকি ৩ হাজার ৫৬১টি পুকুর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গোরস্তান, মসজিদ, মন্দির, আদর্শগ্রাম এবং সাধারণ মানুষের পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিবছর অনিয়ম করে ঘুরেফিরে নামসর্বস্ব সমিতিকেই পুকুর দেওয়া হয়।

গোদাগাড়ীর খাস পুকুরগুলো স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষকে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বেসরকারি সংস্থা সিসিবিভিও। সংস্থাটির কর্মকর্তা মো. আরিফ বলেন, ‘পুকুর সিন্ডিকেট সব পুকুর নিয়ে নেয়। তারপর তাদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষকে চড়া মূল্যে পুকুর নিতে হয়। সেসব পুকুরে মাছ চাষ হয়। গ্রামের মানুষ দৈনন্দিন কাজে পুকুরে নামতে পারে না।’ তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নামছে। তাই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমাতে গ্রামে গ্রামে এসব পুকুর উন্মুক্ত রাখা দরকার।

আরিফ জানান, অল্প কিছু পুকুর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় তাদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এবার ইজারার তালিকায় সেই পুকুরগুলোও আনা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রতিনিধিরা ভূমি অফিসে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা দাবি করছেন, পুকুর সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে যেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে পুকুর দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও আবুল হায়াতকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। নীতিমালা না মেনে দুটির বেশি পুকুর পাওয়া সমিতির কাছে আবারও শিডিউল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম একটি সভায় আছেন জানিয়ে পরে ফোন করতে চান। তবে তিনি ফোন করেননি।

মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে নীতিমালার বাইরে দুইয়ের বেশি পুকুর ইজারা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘এটা দেখে বলতে পারব। নীতিমালার বাইরে কোনো কিছুই হবে না। আমি ঢাকায় আছি, ফেরার পর বিষয়টি দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত