Ajker Patrika

বন্য প্রাণী পোষাই তাঁর নেশা 

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া)
বন্য প্রাণী পোষাই তাঁর নেশা 

ডানা মেলে নীল আকাশের বুকে উড়ে বেড়ানো ইগলের আশ্রয় জুটেছে মানুষের ঘরে। দেড় বছর আগে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর তার আবাস কেড়ে নিয়েছিলেন বৃক্ষের মালিক। এরপর ইগল ছানাটির দায়িত্ব নেন সেই গাছ কাটতে আসা শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা (৬৫)। 

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে দিনমজুর জাহাঙ্গীর। তাঁর বাড়িতেই মমতায় এখন ইগলটি বাস করছে। হয়ে উঠেছে পরিবারের এক সদস্য। নিজেদের খাবার না থাকলেও ঋণ করে ইগলের খাবার জোগাড় করেন জাহাঙ্গীর। 

শুধু ইগল নয়। গাছ কাটতে গিয়ে উদ্ধার করেছেন দুটি বনবিড়াল শাবক। ১৫ দিন ধরে নিজ বাড়িতে রেখেই যত্নে লালন পালন করছেন জাহাঙ্গীর। স্ত্রী, সন্তান, নাতি–নাতনি নিয়ে জাঙ্গীরের পাঁচ সদস্যের পরিবার তারাসহ আটজন। ইগল এবং বনবিড়াল লালন পালনে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সন্তানরাও সহায়তা করেন তাঁকে। 

জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূলত আমি একজন গাছ কাটা শ্রমিক। ছোট বেলা থেকেই আমার পশুপাখির ওপরে ভালোবাসা রয়েছে। দেড় বছর আগে আমি আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিপা গ্রামে ইউক্যালিপটাস গাছ কাটতে যাই। বড় একটি গাছ কাটার সময় গাছের মগডাল থেকে ইগলের সদ্যোজাত বাচ্চাটি মাটিতে পড়ে যায়। আমি সেই বাচ্চাটিকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে আসি। বাজার থেকে প্রতিদিন মাছ কিনে এনে বাচ্চাটিকে খাওয়াতে থাকি।’ 

জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা আরও বলেন, ‘দেখতে দেখতে দেড় বছর কেটে গেছে। ইগল এখন বড় হয়ে গেছে। মাছের পাশাপাশি এখন তো মুরগির মাংস খায়। এখন ওর প্রতিদিন প্রায় আধা কেজি মাছ অথবা মাংস লাগে। আমি ওকে (ইগল) ছেড়ে দিয়ে রাখি। বাহিরে উড়ে সে আবারও আমার বাড়িতেই ফিরে আসে। বাহিরে কোথাও খাবার খায় না। ইগলটি আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘১৭ দিন আগে গাছ কাটতে গিয়ে দুটি সদ্যোজাত বনবিড়ালের বাচ্চা পেয়েছিলাম। দেখে ফেলে আসতে পারিনাই। বনবিড়ালের বাচ্চাদেরও বাড়িতে রেখে লালন পালন করছি। ওদের প্রতিদিন আধা লিটার করে দুধ লাগে।’ 

জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা বলেন, ‘৫ বছর আগে আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ সি ব্লক এলাকায় মহাসড়কের পাশ থেকে বিদ্যুৎ এর খুঁটি সরানো কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। আমি সে সময় খুঁটির পাশে একটি গাছ কাটছিলাম। বিদ্যুৎ এর খুঁটির নিচে একটি বেজির সদ্যজাত শাবক দেখতে পাই। পরে সেটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে এসে পালতে থাকি। দুধ, মাছ, মাংস খাইয়ে বড় করি।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বেজিটি ছেড়ে দেওয়া থাকতো। আমার আর ছেলে জুয়েলের সঙ্গে ঘুরত। বড় হলে ওকে একদিন আমার বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ছেড়ে দিয়ে এসেছিলাম। পাঁচদিন পরেই দেখি বেজিটি আমার বাড়িতে চলে এসেছে। প্রায় ২ বছর আগে আমার প্রতিবেশি কেউ খাবারের মধ্যে বিষ দিয়ে বেজিটিকে খাইয়ে ছিল। পরে বাড়িতে এসে সে মারা যায়।’

জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লার পোষা ইগল। ছবি: আজকের পত্রিকা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী জরিনা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার স্বামী প্রতিদিন কাজ করতে পারেন না, তাই প্রতিদিন আয় হয় না। ইগল এবং বনবিড়াল দুটির জন্য প্রতিদিন প্রায় একশত টাকা খরচ হয়। যেদিন আমার স্বামীর কাছে ওদের খাবার কেনার টাকা থাকে না, সেদিন মন খারাপ করে বসে থাকে। তখন কারও কাছ থেকে ঋণ করে টাকা নিয়ে ওদের জন্য খাবার কিনে আনি। আমাদের খাবারের আগে ওদের খাবারের চিন্তা করি।’ 

জানতে চাইলে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) বগুড়ার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরাফাত রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বড় বৃক্ষ ছাড়া ইগল বা শিকারি প্রাণীগুলো প্রজনন করে না। বড় বৃক্ষ কমে যাওয়ায় এখন বেশ কিছু প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত প্রায়। 

গাছ কাটতে গিয়ে পাওয়া বন্য প্রাণী উদ্ধার করে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া অবশ্যই ভালো উদাহরণ। তবে বন্য প্রাণী পালনে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ইগলকে খুব বেশি খাবার দিলে সে নিজে শিকার করে খেতে পারবে না। পাখিটি যখন নিজে শিকার করে খেতে পারবে, তখন সে তার সঙ্গী জোগাড় করে প্রজনন করতে পারবে। না হলে পাখি বা বন্য প্রাণী মানুষের দাসে পরিণত হবে। 

তিনি বলেন, বন্য প্রাণী বাড়িতে না পোষাই ভালো। বেশি সংস্পর্শে থাকলে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানোর সুযোগ থাকে। 

বনবিড়ালের দুটি শাবক। ছবি: আজকের পত্রিকা জানতে চাইলে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ক প্রভাষক আবু সাঈদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বৃক্ষনিধন করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি করছি। প্রাকৃতিক আবাসস্থল আমরা ধ্বংস করছি, তাতে হুমকির মুখে পড়ছে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী। অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে, আরও অনেক বিলুপ্তপ্রায়। এসব উদ্ভিদ-প্রাণী বা এদের আবাসস্থল বিলুপ্ত হলে আমরা অনেকেই ভাবি, এতে আমার ক্ষতি নেই। কিন্তু এসব কারণেই আজকের বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটেছে আর আবাসস্থল হিসেবে পুরো পৃথিবীই হুমকির মুখে পরতে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত