Ajker Patrika

নেই কোনো কর্মকর্তা, নেত্রকোনায় পিয়ন দিয়ে চলে শিক্ষা কার্যালয়

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
খালিয়াজুরী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বসে আছেন পিয়ন, কর্মকর্তার কক্ষে তালা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খালিয়াজুরী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বসে আছেন পিয়ন, কর্মকর্তার কক্ষে তালা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিয়ন দিয়েই চলছে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে চরম লোকবল-সংকটে থাকা এই দপ্তরে বর্তমানে একজন অফিস সহায়ক (পিয়ন) ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। অফিস সহায়ক এসে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দপ্তর খুলে বসে থাকেন। কোনো কর্মকর্তা না থাকায় কার্যালয়টি বর্তমানে কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ওই কার্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার, হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক ও নৈশপ্রহরী নিয়ে সাতটি পদ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু অফিস সহায়ক ও নৈশপ্রহরী ছাড়া বাকি পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে।

কার্যালয়ের সর্বশেষ দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বদলি হয়ে যান। এরপর নতুন কাউকে সেখানে পদায়ন করা হয়নি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কামরুজ্জামান অন্য জেলায় চলে যাওয়ায় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর থেকে পাশের মদন উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারীকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ কাজ ছাড়া তিনিও খালিয়াজুরীতে আসেন না।

এই দপ্তরে সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ খালি রয়েছে প্রায় তিন বছর ধরে। আর একাডেমিক সুপারভাইজার থেকে শুরু করে অন্য পদগুলো এক থেকে আড়াই বছর ধরে খালি পড়ে আছে। ২৯৭ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাওরবেষ্টিত এই উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নে ৩টি কলেজ, ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল ও একটি আলিম মাদ্রাসা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজার ২১৭ জন। তাদের পাঠদানের জন্য তিন শতাধিক শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় কার্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও সঠিকভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না।

১৯ নভেম্বর দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়সহ অন্য একটি কক্ষ তালাবদ্ধ। দরজার ওপরে মাকড়সার বাসা জমে আছে। আরেকটি কক্ষে একমাত্র কর্মরত অফিস সহায়ক খাইরুল আমিন সিকদার বসে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনোমতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস খুলে কার্যক্রম চালু রেখেছি। গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় বিভিন্ন কাজে ফাইলপত্র নিয়ে আমাকে মদন ও জেলা শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। সব কাজও তো আমি বুঝি না। তবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মদনের স্যার প্রয়োজন হলে আসেন। ঊর্ধ্বতন স্যাররা বিষয়টি জানেন।’

তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জনবল না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের তদারকি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় জনবল পূরণের মাধ্যমে অফিসের কার্যক্রম সচল করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুর রউফ স্বাধীন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। শুধু একজন পিয়ন অফিস খুলে বসে থাকেন। এতে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। আমরা বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি তুলে ধরার পরও কোনো প্রতিকার মেলেনি।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারী বলেন, ‘আমাকে মদনের পাশাপাশি কেন্দুয়া ও খালিয়াজুরী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজন হলে খালিয়াজুরীতে যাওয়া হয়। অফিস সহায়ক খায়রুল আমিন ফাইলপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে থাকেন।’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘খালিয়াজুরীতে লোকবল-সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছি।’

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ