Ajker Patrika

নওগাঁর রাণীনগর: ৬ মাস ধরে পানিবন্দী তারা

  • পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট বন্ধ করে তুলার মিল ও মুরগির খামার নির্মাণ
  • পানিবন্দী ১০০ পরিবার। ঘরে হাঁটুপানি, বাইরে সড়কে রান্না
মো.সাহাজুল ইসলাম, রাণীনগর (নওগাঁ)
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৫৫
এভাবেই নলকূপ থেকে পানি নিয়ে আসছেন এক বাসিন্দা। সম্প্রতি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার চকাদিন মহল্লায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এভাবেই নলকূপ থেকে পানি নিয়ে আসছেন এক বাসিন্দা। সম্প্রতি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার চকাদিন মহল্লায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর রাণীনগরের চকাদিন মহল্লা ছয় মাস ধরে জলমগ্ন। ঘরবাড়ি ডুবে পানিবন্দী মানুষ। প্রতিদিনের যাপিত জীবন যেন রীতিমতো লড়াই। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, রান্না হচ্ছে সড়কে। বারবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, উপজেলার চকাদিন গ্রামে পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট বন্ধ করে তুলার মিল ও মুরগির খামার নির্মাণ করায় প্রায় ১০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ছয় মাস ধরে এই জলাবদ্ধতার কারণে মহল্লায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানায়, কাশিমপুর ইউনিয়নের কুবরাতলী চকাদিন মহল্লায় প্রায় ১০৬টি পরিবার বসবাস করে। মহল্লার চারপাশে পাকা সড়ক থাকায় এটি পুরোপুরি নিম্নভূমিতে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানি আগে মহল্লার উত্তর দিকে কুবরাতলী-ত্রিমোহনী হাট সড়কের চককুতুব এলাকার কালভার্ট এবং দক্ষিণে রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক মহাসড়কের চকাদিন এলাকার কালভার্ট দিয়ে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু এই দুই কালভার্টের মুখ মাটি ভরাট করে তুলার মিল ও মুরগির খামার নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না।

মহল্লার বাসিন্দা শাকিলা বিবি বলেন, ‘ছয় মাস ধরে ঘরে প্রায় হাঁটুপানি জমে আছে। মেঝেতে চৌকির ওপর রাত যাপন করতে হচ্ছে। বাইরে সড়কে গিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। ঘরের বিভিন্ন আসবাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

রকিব মণ্ডল বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে কোমর পর্যন্ত পানি ভেঙে রাস্তায় যেতে হচ্ছে। ছোট শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। প্রতিদিন কাপড় ভিজে যাওয়ায় সিমেন্টের চাড়াইতে চলাচল করতে হচ্ছে।’

আনসার সদস্য সিদ্দিক মণ্ডল বলেন, ‘হাঁটুপানি ভেঙে টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ঘরে পানি ঢোকায় দীর্ঘ সময় ধরে মহল্লাবাসীর দুর্ভোগ চলছে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সাপ-পোকার আতঙ্কে জীবন কাটছে।’

জাহানারা বিবি বলেন, ‘ঘরে হাঁটুপানি থাকার কারণে বসবাস করতে না পেরে প্রায় তিন মাস ধরে মেয়ের বাড়িতে রয়েছি। আমার মতো ফাতেমা আক্তার এবং রাশেদা বিবিও বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।’ সাথী আক্তার বলেন, ‘তিন মাস আগে শ্বশুর মারা গেছেন। বাড়ির পাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও পানিতে ডুবে থাকার কারণে সেখানে দাফন করতে পারিনি। এটি আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।’

ভুক্তভোগী এক তুলার মিলের মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুই কালভার্টের নালার মুখ বন্ধ থাকায় বৃষ্টিতে পানি বের হতে পারছে না। আমাদের মিলের গুদামে প্রায় আড়াই লাখ টাকার তুলা নষ্ট হয়েছে। অন্য মিলের মালিক উজ্জ্বল হোসেনের প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

জানতে চাইলে কালভার্টের নালার মুখ বন্ধ করে মিল নির্মাণকারী রেহেল হোসেন বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের জন্য মাটি খুঁড়ে নালা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি বের হচ্ছে না। এতে আমারও প্রায় দেড় লাখ টাকার তুলা নষ্ট হয়েছে।’

মুরগির খামার নির্মাণকারী আশরাফ আলী বলেন, ‘কালভার্টের নিচ দিয়ে নলকূপের ড্রেন ছিল। এই ড্রেন দিয়ে মহল্লার পানি নিষ্কাশন হতো এবং নলকূপের পানি জমিতে সেচ দিত। মাটির নিচে পাইপ দিয়ে ড্রেন নির্মাণের কারণে ওপরের ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই মাটি ভরাট করে খামার নির্মাণ করেছি।’

এ বিষয়ে কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু বলেন, ‘ওই মহল্লার পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ জায়গা দিতে রাজি হয়নি।’ রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাকিবুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে গত বুধবার বিকেলে পরিদর্শন করেছি। সাময়িকভাবে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে ড্রেন নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনের সূত্রপাত ও হতাহতের বিষয়ে যা জানা গেল

প্রায় ২৫০ কারখানার পণ্য পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি: বিজিএমইএ সভাপতি

শাহজালালের কার্গো ভিলেজে কী ধরনের পণ্য থাকে

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

এখনো যথেষ্ট আগুন রয়েছে, তবে নিয়ন্ত্রণে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত