Ajker Patrika

তুলশীমালার পর শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’ হলো জিআই পণ্য

শেরপুর প্রতিনিধি 
Thumbnail image
শেরপুরের ছানার পায়েস। রঘুনাথ বাজার এলাকার অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের তুলশীমালা ধানের পর এবার বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পেল জেলার সুস্বাদু ‘ছানার পায়েস’। আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত এক পত্রে দেশের ৪৪ তম জিআই পণ্য হিসেবে ছানার পায়েসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আজ বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে’—এ স্লোগানকে সামনে রেখে শেরপুর জেলার ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়নে কাজ করছে প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় তুলশীমালা ধানের পর শেরপুরের সুস্বাদু মিষ্টান্ন ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। অনেক যাচাই-বাছাই শেষে আজ আমরা সেই স্বীকৃতির সনদ হাতে পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি শেরপুরবাসীর জন্য আনন্দের সংবাদ। ছানার পায়েস উৎপাদনে কারিগরসহ বেশ কিছু জনবল কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দেশে-বিদেশে এর প্রচার ও প্রসার আরও বাড়াতে পারলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া তুলশীমালা ও ছানার পায়েসের মতো শেরপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার মতো আরও একাধিক পণ্যের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করার কথা ভাবছি আমরা।’

এদিকে ছানার পায়েস জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলার সচেতন মহলসহ সাধারণ মানুষ। আর স্বীকৃতির আনন্দে একইদিন বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে ছানার পায়েস বিতরণ করেছেন তরুণ অনলাইন উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন।

জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর শেরপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ছানার পায়েস বিতরণ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর শেরপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ছানার পায়েস বিতরণ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজার এলাকার অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাপ্পী দে বলেন, শেরপুরের ছানার পায়েসের ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় শেরপুর শহরে। তখন হাতে গোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হলেও এখন জেলা শহরেই অন্তত ২০টি দোকানে ছানার পায়েস তৈরি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি কেজি ছানার পায়েস প্রকার ভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবার সহযোগিতায় তুলশীমালা ধানের পর এবার ছানার পায়েস জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শেরপুরের অর্থনৈতিক খাত চাঙ্গা হবে। আমাদের এই ছানার পায়েসের দেশ ও দেশের বাইরেও সুনাম রয়েছে। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সেটি আর বাড়বে আশা করি।’

ছানার পায়েস কীভাবে বানানো হয়, এ বিষয়ে শেরপুর শহরের গোয়ালপট্টি এলাকার দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টি তৈরির কারিগর রিপন চন্দ্র ভদ্র জানান, ছানার পায়েস তৈরি করতে দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ লাগে। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটি চিনিমিশ্রিত সিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে দিয়ে হালকা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু এই ছানার পায়েস। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরিতে দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচ লাগে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৫ জুন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় শেরপুরের সুগন্ধি তুলশীমালা ধান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত