Ajker Patrika

পর্যটকদের প্রিয় জায়গা হয়ে উঠছে ত্রিশালের চেচুয়া বিল

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ০৫: ৫৬
Thumbnail image

প্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজেছে ত্রিশালের চেচুয়া বিল। যত দূর চোখ যায় শাপলা ফুলের রক্তিম আভার হাতছানি। বিলের পানিতে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা। মাঝে মাঝে সাদা ও বেগুনি শাপলার দেখাও মেলে। এর সঙ্গে ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভা এখানকার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমাচ্ছে। 

এই বিলের যে অংশে শাপলা ফুটেছে সেখানে যেতে পর্যটকদের বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সেই শাপলার দেখা পেতে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। শাপলা ফুলের অধিক সমাহার কাছ থেকে বা ছুঁয়ে দেখতে নামতে হয় পানিতে, ভিজাতে হয় জামা। তবুও ভ্রমণ পিপাসুরা প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিন্দু মাত্র পিছুটান হন না। 

উপজেলা সদর থেকে এই বিলের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বিশাল বিল এটি। সারা দেশের মানুষ অবশ্য এ বিলকে প্রথমে চিনেছে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে। একদিন রাত পেরিয়ে সকাল হতেই কিছু লোক দেখতে পায় সেখানে থাকা জমাটবাঁধা কচু হঠাৎ সরে গিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে। এটাকে অলৌকিক ভেবে কয়েকজন এখানে গোসল করে ও এর পানি খেয়ে রোগ থেকে মুক্ত হয়েছে বলে জানান। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ বন্ধুর পথ পেরিয়ে কাঁদা মাখা পানিতে গোসল, গড়াগড়ি ও কাদাযুক্ত পানি সংগ্রহ করতে এখানে ভিড় করে। 

এমন গুজবও ছড়ানো হয়েছিল, হাজারো সমস্যার একমাত্র সমাধান এই চেচুয়া বিল। বিলের পানিতে এক ডুবেই সেরে যাবে যেকোনো রোগ। এখানকার মাটি ও পানি নাকি সর্বরোগের ওষুধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিতে ছড়ানো গুজবে হাজারো মানুষের তথাকথিত তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল ময়মনসিংহের এই চেচুয়া বিল। 

ওই সময় উপজেলা প্রশাসন, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে চেচুয়া বিলের পানি, মাটি, কচুরিপানা ব্যবহার না করার জন্য প্রথমে মাইকে আহ্বান জানায়। এতে কাজ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের লাঠিচার্জের আদেশ দেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

সৌন্দর্য রক্ষায় এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে এই বিলে ফুল তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘুরতে আসা মানুষকে এলাকাবাসী সহযোগিতা করছে। দর্শনার্থীদের নিয়মানুবর্তিতায় হয়তো এভাবেই বিলটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। 

ভ্রমণ পিপাসু মানুষ

চেচুয়া বিলের সৌন্দর্য দেখতে যাবেন যেভাবে
প্রথমে বাস স্ট্যান্ড থেকে বালিপাড়া রোডে অটো ভ্যানে করে ঠাকুর বাড়ি মোড়ে এসে নামতে হবে। ভাড়া নিবে ১০ টাকা। এরপর চেচুয়া বিল পর্যন্ত ভ্যান দিয়েও যেতে পারবেন আবার হেঁটেও যেতে পারবেন। 

চেচুয়া বিলের শাপলা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ-উল হাসান রাফি বলেন, ‘চেচুয়া বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিঃসন্দেহে মনোমুগ্ধকর। অজস্র শাপলায় ভরে গেছে চারপাশ। দেখলে মনের ভেতর অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, শিক্ষকেরা আসছেন। তবে এখানে পৌঁছাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব নাজুক। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বিলটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।’   

শাপলা ফুলের সমাহার দেখতে আসা আবু রাইহান জানান, সত্যি অসাধারণ একটি জায়গা। শাপলা ফুলের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এবং পর্যাপ্ত প্রচার পেলে এটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘নতুন যোগদানের পরই শুনেছি চেচুয়া বিলের গুজব কাণ্ডের কথা। তবে এখানে লাল পদ্মের সমাহার যে কোন প্রকৃতিপ্রেমীকে মুগ্ধ করে। চেচুয়ার সৌন্দর্য ধরে রাখতে ও পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন প্রকৃতি উপভোগের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’   

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত