Ajker Patrika

বন্যার আগেই ধসে পড়ল ফসল রক্ষা বাঁধ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
বন্যার আগেই ধসে পড়ল ফসল রক্ষা বাঁধ

নেত্রকোনার মদনে সংস্কারের চার দিনের মাথায় ধসে পড়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। অভিযোগ উঠেছে, কাজের মান খারাপ হওয়াসহ প্রকল্পে অনিয়মের কারণেই বাঁধ ধসে পড়েছে।

উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের ‘বালুই ব্রিজ উত্তরপাড় ফসল রক্ষা বাঁধ উপ-প্রকল্প’ বাঁধটি গত শনিবার ধসে পড়ে। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এর সংস্কারকাজ শেষ হয়। 

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পাউবোর তত্ত্বাবধানে হাওরে বোরো ফসল রক্ষায় কাবিটা কর্মসূচির আওতায় জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ২০৬টি বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মদন উপজেলায় ২৪টি বাঁধ রয়েছে। এ কাজের বরাদ্দ ধরা হয় ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ‘বালুই ব্রিজ উত্তরপাড় ফসল রক্ষা বাঁধ উপ-প্রকল্প’ বাঁধটির বরাদ্দ ১৮ লাখ ১১ হাজার ৯৭৯ টাকা। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর জেলার সব বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। 

স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে প্রতিবছরই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তবু এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে গেলে উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের বেঁচে থাকার অবলম্বন শেষ হয়ে যাবে। এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেবে। পরিবার পরিজন নিয়ে কৃষকেরা পথে বসবে। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যর সংকটও দেখা দেবে। 

উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের রফিকুল ইসলাম, আনু মিয়া ও গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘হাওরে একটি মাত্র বোরো ফসলের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে আমাদের পথে বসতে হবে। একই অবস্থা হবে পুরো এলাকার কৃষকদের।’ 

কৃষকের অভিযোগ, পাশে জায়গা থাকলেও বাঁধটি নদীর পাড় ঘেঁষে করা হয়েছে। এ ছাড়া মাটি আটকে রাখার জন্য পর্যাপ্ত বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া যথাযথভাবে মাটি বসানো হয়নি। যে কারণে বাঁধটি ধসে পড়েছে।

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল হক বলেন, কৃষকেরা জায়গা না দেওয়ায় বাঁধটি নদীর পাড় ঘেঁষে করা হয়েছে। নদীর ঢেউয়ে নদীর পাড়সহ বাঁধটির কিছু অংশ ধসে গেছে। এখন এটি মেরামতে দুই সারিতে বাঁশের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। পরে এতে বালুভর্তি বস্তা দেওয়া হবে। তবে বাঁধটি ধসের কারণ হিসেবে মাটি আটকানোর জন্য বাঁশের বেড়া প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

 মদনে ধসে পড়া বাঁধপিআইসির সভাপতি আজিজুল হক সোহেল বলেন, নিচের অংশ গভীর হওয়ায় মাটি দিলেও হারিয়ে যায়। বাঁশের বেড়া ও রড দিয়ে শক্ত টানা দেওয়া হয়েছিল। তবু সম্প্রতি বাঁধটি ধসে গেছে। বাঁধটি টেকসইভাবে দেওয়ার জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত। 

পিআইসির সভাপতি আরও বলেন, ‘নির্ধারিত টাকাই তো সময়মতো পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত বরাদ্দ পরের বিষয়। এসব কাজে আমাদের লোকসান হয়। নিজের জমি আর ফসলের মায়ায় এ কাজ নিই। বাঁধটি শক্তভাবে মেরামতের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বলেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনো বরাদ্দ পাইনি।’ 

উপজেলা কাবিটা কর্মসূচির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিনা শাহরীন বলেন, ধসে যাওয়া জায়গাটি মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। 

পাউবোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, জায়গাটি অনেক গভীর বিধায় এমনটা হয়েছে। দ্রুত এটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত