Ajker Patrika

২৫ বছর ধরে লাশ টানেন বারেক

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭: ৩৬
Thumbnail image

ঝড়-বৃষ্টি কিংবা গভীর রাতে কোনো অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেই থানা থেকে ডাক পড়ে বারেকের। লাশ টানার ভ্যানগাড়ি নিয়ে বারেক ছুটে চলেন মরদেহ আনতে। সুরতহালের পর সেই লাশ নিয়ে যান থানায়, সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। পোস্ট মর্টেমের পর তা পৌঁছে দেন আত্মীয়দের কাছে। সম্পূর্ণ কাজ তিনি একাই করেন।

বারেক ডোমের পুরো নাম আবদুল বারেক। ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের ছয়গন্ডা মহল্লার মৃত মাহফিজের ছেলে তিনি। পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। তবে এখন তিনি বারেক ডোম হিসেবেই পরিচিত।

রিকশাচালক থেকে ডোম হওয়ার গল্প জানতে চাইলে বারেক বলেন, ‘২৫ বছর আগে উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের বরইকান্দি গ্রামে চার-পাঁচ দিনের পচা একটি মরদেহ উদ্ধার হয়। তখন থানায় কোনো ডোম নেই। কেউ রাজি হয় না সেই লাশ থানায় নিতে। দারোগা জোর করে লাশ আমার রিকশায় তুলে দেন। সেই থেকে শুরু। তারপর কোনো অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেই থানা থেকে ডাক পড়ে।’ 

বারেক আরও বলেন, ‘থানায় তখন কোনো ভ্যানগাড়ি ছিল না। আমি নিজ খরচে একটি ভ্যানগাড়ি বানিয়ে নেই। সেই ভ্যানগাড়িও এখন নষ্ট। অন্য একটি রিকশার সঙ্গে ভ্যানগাড়ি জুড়ে লাশ টানি। এত কিছুর পরও থানায় আমার স্থায়ী নিয়োগ হয়নি। ফলে নিয়মিত বেতন-ভাতাও পাই না। লাশপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা পাই। তা দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার। সব সময় তো আর কাজ থাকে না, তখন অর্থসংকটে পড়তে হয়।’ 

লাশ আনতে গিয়ে কখনো ভয় পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে বারেক ডোম বলেন, ‘প্রায় ১২ বছর আগের ঘটনা। মাঝরাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ নিয়ে ফিরছিলাম। শ্যামগঞ্জ বাজারের কাছে যেতেই হঠাৎ ভ্যান থেমে যায়। মনে হচ্ছিল কে যেন পেছন থেকে টেনে ধরেছে, অথবা লাশের ওপর কিছু একটা বসে আছে। অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। তখন ভয়ে আঁতকে উঠি, সারা শরীর ঘেমে ভিজে যায়। পরে পকেটে থাকা টর্চ জ্বালিয়ে দেখি এক পাগল ভ্যানে লাশের ওপর বসে আছে। সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম।’ 

বারেক আরও জানান, ২৫ বছরে তিন হাজারের বেশি মরদেহ বহন করেছেন তিনি। ২০টির বেশি লাশ কবর থেকে তুলেছেন। অর্ধশতাধিক পচা-গলা মরদেহ হাতে ধরেছেন। শুরুতে এসব করতে খুব খারাপ লাগত, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। 

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘থানায় নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ডোম নেই। বারেক দীর্ঘদিন যাবৎ মরদেহ টানার কাজ করছে। তাকে কোনো মাসিক বেতন দেওয়া হয় না, সে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত