Ajker Patrika

শেরপুর জেলা কারাগার চালু হয়নি দেড় মাসেও, দুই-তৃতীয়াংশ আসামি পলাতক

শেরপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

শেরপুর জেলা কারাগার দেড় মাসেও চালু করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া পালিয়ে যাওয়া ৫১৮ জন হাজতি ও কয়েদির মধ্যে এখনো দুই-তৃতীয়াংশ পলাতক রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এ সময় কারাগার থেকে ৫১৮ জন হাজতি-কয়েদি পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো জনতা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শেরপুর জেলা কারাগারের সামনে জড়ো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে কারাগার ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কারারক্ষীরা। এ অবস্থায় প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, রামদা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে কারাগারের ভেতরে ঢুকে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

এ সময় কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ৫১৮ জন বন্দীর সবাই বেরিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দীদের মধ্যে ১০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ৭০-৮০ জন বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ছিলেন। অন্যরা বিচারাধীন ও তদন্তাধীন বিভিন্ন মামলার আসামি। হামলাকারীরা কারাগারের অস্ত্র, ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দীদের মজুত করা খাদ্যসামগ্রী, কারাগারের বিভিন্ন মালামালসহ টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে কারাগারের মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে তাঁদের সহায়তায় কয়েকটি অস্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়। দুর্বৃত্তরা কারাগারের প্রধান ফটক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাগারের সুপার ও জেলারের অফিস কক্ষ ও বাসভবনের সকল আসবাবপত্র, রান্নাঘর, ক্যানটিন পুড়িয়ে দেয়। আসামিদের ওয়ার্ড, কনডেম সেল ও কারা হাসপাতালে ভাঙচুর করা হয়। তাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় জেলা কারাগার। এদিকে ঘটনার কয়েক দিন পর কারাগারের জেলার লিপি রানি সাহা বাদী হয়ে ১০-১২ হাজার অজ্ঞাতপরিচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় মামলা করেন।

এদিকে জেলা কারাগারের লুণ্ঠিত অস্ত্রসহ মালামাল ফেরত বা অবস্থান জানানোর জন্য স্থানীয় ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে মাইকিং করা হয়। এরপর লুণ্ঠিত ৯টি অস্ত্রসহ বেশ কিছু মালামাল ফেরত পাওয়া যায়। তবে ঘটনার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কারাগার সচল করা যায়নি। কারাগার সচল না থাকায় নতুন করে আটক আসামি পাঠাতে হচ্ছে পাশের জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের প্রধান ফটকের পাশে সিসিটিভি মনিটরিং রুমে বসে আপাতত কোনোরকমে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে মেরামতের কোনো কাজ এখনো শুরু হয়নি।

ঘটনার বিষয়ে জেলা কারাগারের সুপার মো. হুমায়ুন কবীর খান বলেন, কারাগারে হামলার পরপরই কারা অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কারাগার দ্রুত চালুর করার বিষয়ে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারা খুব শিগগিরই মেরামত-সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে লুট হওয়া কিছু গুলি পাওয়া না গেলেও ৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর পলাতক হাজতি-কয়েদিদের মধ্যে ইতিমধ্যে আটকসহ ১২৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৯৯ জন জামিন পেলেও ২৬ জনকে পাশের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কারাগার মেরামতের কাজ শুরু করার বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার মাহবুবুর রহমান বলেন, কারাগার মেরামত ও সংস্কার কাজের টেন্ডার আহ্বান করতে নানা প্রক্রিয়ার কারণে কিছুটা সময় নিতে হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগুলো প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে মেরামতের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে কারাগারকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে সংস্কার কাজ শেষ করে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেলা কারাগার চালু করা সম্ভব হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত