Ajker Patrika

শিক্ষার্থীকে মারধর বাকৃবি ছাত্রলীগ সভাপতির, ঠেকাতে গিয়ে লাঞ্ছিত শিক্ষক

বাকৃবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২১: ৪৪
Thumbnail image

জোরপূর্বক কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষককে লাঞ্ছনা এবং মাসহ এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলামের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারিকে লাঞ্ছিত করা হয় এবং মারধর করা হয় ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফতাব দুর্বারকেও। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। 

বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে আফতাব দুর্বার ওই বিভাগে পরীক্ষা দিতে আসেন। পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার সময় তাঁকে মারধরের হুমকি দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এতে পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার মিল্টন শরণাপন্ন হন বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলামের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ভেটেরিনারি অনুষদের ডিনকেও বিষয়টি জানান ওই শিক্ষক। পরে ঘটনাস্থলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন উপস্থিত হন। প্রক্টর আসার পর পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষকেরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। 

এর কিছু সময় পর প্রক্টর ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেই ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রিয়াদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী বিনা অনুমতিতে ড. পূর্বার অফিসরুমে প্রবেশ করেন। এ সময় ড. পূর্বা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও দূর্বারকে ব্যাপক মারধর করেন এবং কক্ষ তছনছ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াদ। এ সময় ছাত্রকে রক্ষা করতে গেলে লাঞ্ছনার শিকার হন ড. পূর্বা ও সহকারী প্রক্টর ড. আফরিনা মুস্তারি। মারধরের সময় উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ঘটনায় জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আফতাব দুর্বার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির নেতা ছিলেন। দলীয় কোন্দলের কারণে তাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি রিয়াদের বিরোধ চলছিল।

আজকে সন্ধ্যায় রিয়াদ হঠাৎ করে অধ্যাপক ড. পূর্বার কক্ষে প্রবেশ করে দুর্বারকে মারধর শুরু করেন। রিয়াদের মারধর করা দেখে তাঁর কর্মীরাও মারধর শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীর মাকেও মারধর করা হয়। পরে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। 

এ নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী আফতাব দুর্বার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়ার এটাই আমার শেষ সুযোগ। তাই রাজনীতি ছেড়েছি। এর আগেও বেশ কয়েক বার পরীক্ষা দিতে এসে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এজন্য আজ আমার মাকে নিয়ে এসে পরীক্ষাকক্ষে উপস্থিত হয়েছিলাম। পরীক্ষা শেষে কক্ষ ত্যাগের সময় ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর আনাগোনা দেখে আমি ড. পূর্বা ইসলামের কক্ষে অবস্থান করি। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদ নিজে এসে আমাকেসহ আমার মা ও শিক্ষকদের মারধর করেছেন। এ সময় আমার খালা-খালুকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার পাশাপাশি খালুকে একপাশে নিয়ে গিয়ে মেরেছেন। আমার ভুল থাকতে পারে। আমি অনেকবার রিয়াদ ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু ক্ষমা না করে তিনা বারবার আমাকে হেনস্তা করেছেন এবং আজ মারধর করলেন।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মারধর বা ধাক্কাধাক্কির সময় কাউকে রক্ষা করতে গেলে ধাক্কা লাগতেই পারে। কিন্তু সেই ধাক্কা লাগাকে যদি বলা হয় মারধর করা হয়েছে, তাহলে দায়িত্ব পালন করা যাবে না। এটিকে একটি ইস্যু বানানো হয়েছে।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে একজন শিক্ষার্থীকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা যারা শিক্ষক ছিলাম তারা দুর্বারকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। তবে অনেকের মধ্যে শিক্ষকদের কাউকে লাঞ্ছনা করা হয়েছে কি না, সেটি আমার জানা নেই।’ 

প্রক্টর ড. মহির উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমার। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। মারধরের ঘটনাটি আমার সামনে ঘটেনি। ঘটনার সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দুই জন সহকারী প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিষয়টি ভালোভাবে জানেন।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘আমাকে হেয় করার জন্য এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অভিযোগগুলো সাজানো নাটক। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বরং আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুর্বারকে ছেলেদের হাত থেকে বাঁচিয়েছি। এবং সেখান থেকে তাঁকে বের হতে সাহায্য করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত