Ajker Patrika

হাট ইজারায় কোটি টাকায় সমঝোতা

  • ত্রিমোহনী নতুন বাজার পশুর হাটটি ইজারা পেয়েছেন ব্যবসায়ী শাহীন আলম
  • কোটি টাকা লেনদেনের কথা স্বীকার করে বিএনপির নেতার অডিও ভাইরাল
ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৩২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কোটি টাকা লেনদেনে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় একটি পশুর হাট ইজারায় ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে পৌর প্রশাসন ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সমঝোতার একটি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমঝোতার এই টেন্ডারপ্রক্রিয়া বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।

সম্প্রতি পৌরসভার আওতায় চারটি হাটবাজার ও পৌর বাস টার্মিনাল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পৌর প্রশাসন। সে অনুযায়ী গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ছিল দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। ত্রিমোহনী নতুন বাজারের ইজারা শিডিউল ২২টি বিক্রি হয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্রেতাই দরপত্র জমা দেননি। ১৮ ফেব্রুয়ারি দরপত্র বক্স খোলা হলে ত্রিমোহনী নতুন বাজার পশুর হাটটি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৪৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৩ টাকায় পান মেসার্স শাহীন এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর শাহীন আলম।

১৮ ফেব্রুয়ারি টেন্ডারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর হাট ইজারা নিয়ে একটি অডিও কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে ইজারা নিয়ে মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম কালা ও শফিকুর রহমান মামুন নামের এক ব্যবসায়ী কথা বলেন। হাটটির কীভাবে ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, মামুনের এমন প্রশ্নে কালা বলেন, পৌরসভার ত্রিমোহনী নতুন বাজার হাটটি পেতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শাহীন আলমের কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

ত্রিমোহনী নতুন বাজারের বর্তমান ইজারাদার আবদুল মান্নান অভিযোগ করেন, ‘গরু-ছাগলের হাটটি বেশ কয়েক বছর ধরে পরিচালনা করে আসছি। হাটটি পুনরায় পেতে ছেলে তাওসিফ ইবনে মান্নান এবং ভাই মাসুদ পারভেজের নামে দুটি শিডিউল কিনি। উপজেলা বিএনপির নেতা জাহাঙ্গীর আলম, সোহেল, দিনারসহ বেশ কয়েকজন আমার শিডিউল ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা আমাকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ দিয়ে ২ কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিল; কিন্তু বাজারে এত ব্যবসা না থাকায় আমি অপারগতা প্রকাশ করি। যারা বাজারের ডাক পেয়েছে, তারা কোটি টাকা খরচ করেছে।’

অডিও কথোপকথনের বিষয়ে তারাটি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম কালা বলেন, ‘জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুর গ্রুপ করি আমি। তিনি মুক্তাগাছা থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আশাবাদী। হাটবাজার ইজারা নিয়ে আমার একটি কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে টাকা লেনদেনের বিষয়টি মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। আসলে ঘটনাটি তা নয়।’

মুক্তাগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সোহেল বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে মান্নান কমিশনার ও তাঁদের সিন্ডিকেট বাজারটি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তাঁদের আওয়ামী লীগের দাপটের কারণে আমরা বাজারের ধারেকাছেও যেতে পারিনি। এত দিনের লোভে এবারও সে টেন্ডারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। সে আওয়ামী লীগ করে তাই সব সময় পলাতক থাকে, টেন্ডার কীভাবে জমা দেবে? কোনোভাবে সে বাজার পেলেও করতে পারবে না। এখনই গন্ডগোল শুরু হয়েছে। টেন্ডারপ্রক্রিয়ায় কোনো টাকাপয়সা লেনদেন হয়নি। বরং মান্নান বাজার নিতে উল্টো টাকা দিতে চাইছিল।’

এ বিষয়ে শাহীন আলমের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘টেন্ডারপ্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হয়েছে। ঘরে বসে থেকে টেন্ডার জমা না দিয়ে কেউ যদি আমাকে দায়ী করে, সেটা সঠিক নয়। এতে সমঝোতা বা টাকা লেনদেন হয়নি।’

যিনি শিডিউল জমা দিতে পারেননি, তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করেছেন জানিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ বলেন, ‘অ্যাপিলেড কর্তৃপক্ষ হিসেবে শুনানির পর আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছি রিটেন্ডারের। যেখানে সরকার সর্বোচ্চ রাজস্ব পাবে সে বিষয়টি আমরা দেখছি। প্রথমে যে বেশি রেট দিয়ে দাখিল করেছে, তাকে টেন্ডার জমা দিতেই দেওয়া হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত