Ajker Patrika

৩০ ঘণ্টা আটকে রেখে ছেড়ে দিল থানা-পুলিশ, পরদিন অপহরণ মামলায় আসামি

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২২: ৪৫
৩০ ঘণ্টা আটকে রেখে ছেড়ে দিল থানা-পুলিশ, পরদিন অপহরণ মামলায় আসামি

জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানা হেফাজতে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গভীর রাতে দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। যদিও আটকের পর ২৪ ঘণ্টার বেশি থানায় রাখার নিয়ম নেই। ওই দুই ব্যক্তি থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পরদিনই এক ছাত্রীকে অপহরণের মামলার আসামি হয়েছেন। 

পুলিশের দাবি, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ তোলেননি মামলার বাদী। সে কারণেই ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে অপহরণ মামলার বাদীর ভাষ্য, তিনি যথাসময়েই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। 

আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলায় গত ১১ মার্চ চলতি বছরের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ করেন উপজেলার টাঙ্গারিয়াপাড়ার আজাদ হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন। মেয়েকে ফিরে পেতে থানা-পুলিশের দারস্থ হন ওই ছাত্রীর বাবা। যদিও দাবি করা হচ্ছে, প্রেমের টানে ওই ছাত্রী স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছে।

১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় অভিযুক্ত আনোয়ারের ছোট ভাই কলেজছাত্র ইমাম আলী এবং খালাতো বোন আমেনা বেগমকে থানা হেফাজতে নেন বকশীগঞ্জের কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খায়রুল ইসলাম। 

পরদিন ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আনোয়ারকে আটকসহ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে থানায় আনে পুলিশ। ১৬ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে থানা থেকে ইমাম আলী ও আমেনা বেগমকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

পরদিন বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে রুজুকৃত অপহরণ মামলায় ইমাম আলী ও আমেনাকেও আসামি করা হয়। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মেয়ে অপহণের অভিযোগে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে আনোয়ারসহ তাঁর ছোট ভাই ইমাম আলী, বাবা আজাদ এবং খালাতো বোন আমেনার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। 

ভুক্তভোগী ইমাম আলী বলেন, ‘আমিসহ আমার খালাতো বোন আমেনা বেগমকে ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে থানায় এনে ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টার দিকে থানা থেকে আমাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।’

ইমাম আরও বলেন, ‘আমি স্থানীয় গাজী আমানুজ্জামান মডার্ন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এসআই খায়রুল ইসলাম থানায় আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। আমার খালাতো বোন আমেনাকেও গালাগালি করেছে।’ 

ভুক্তভোগী আমেনা বেগম বলেন, ‘পুলিশ অযথা আমাদের ধরে থানায় রেখেছিল। প্রেমের টানে ওই ছাত্রী পালিয়েছে। আমাদের গালাগালি করাসহ কষ্ট দিয়েছে পুলিশ। নির্দোষ হওয়ায় আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের হয়রানি করতেই আসামি করা হয়েছে।’ 

ভুক্তভোগী ইমাম আলীর ছোট ভাই আশিক মিয়া বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে ইমাম আলী ও আমেনাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ তাদের মারধরও করেছে।’ 

বকশীগঞ্জের কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে থানায় আনা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে আইনবিরোধী কোনো কাজ করা হয়নি।’

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান বলেন, ‘মামলার বাদী প্রথমে মেয়ে হারানোর জিডি করেন। জিডিমূলে এক যুবককে আটক করাসহ আমরা ভিকটিমকে উদ্ধার করি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিয়েছে। মামলার বাদী বিলম্বে অভিযোগ দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো যায়নি।’ 

মামলা বাদী বলেন, ‘মেয়ে অপহরণের দুই দিন পর থানায় অভিযোগ দিয়েছি। দুজনকে পুলিশ কেন ছেড়ে দিয়েছেন, সেটা জানি না।’ 

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার বেশি সময় কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে রাখা আইনগত সুযোগ নেই। বরং হেফাজতে নেওয়া ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে সোপর্দ করার বিধান। এই বিধান ভঙ্গের ঘটনা ঘটে থাকলে, ভুক্তভোগীরা আদালতে যেতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত