Ajker Patrika

প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব চাচি-ভাতিজার, ব্যাহত পাঠ

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি 
শেরপুরের নকলা উপজেলার ইসলামনগর সাইলামপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শেরপুরের নকলা উপজেলার ইসলামনগর সাইলামপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নকলায় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে চাচি ও ভাতিজার মধ্যে টানাটানি চলছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবরুদ্ধ এবং লেখাপড়ার সুশৃঙ্খল অবস্থা ফিরিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে। না হলে সবাইকে ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে বিদায় করে দিতে বলেছে।

উপজেলার টালকী ইউনিয়নের ইসলামনগর সাইলামপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে এই অবস্থা চলছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে অফিসকক্ষে তালা ঝুলিয়ে সব শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে। তারা মাঠে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় ও বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক দীপ জন মিত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ ও নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান। পরে ইউএনও দুই দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ৫টার দিকে অফিসকক্ষের তালা খুলে দেয়।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদের দাবি করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তার ও সহকারী গ্রন্থাগারিক সেলিম আহমেদ রুবেল। সালমার স্বামী নুরুল হকের আপন ভাতিজা সেলিম। অবরুদ্ধ করার সময় সালমা বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে থাকলেও সেলিমকে পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল থেকে সালমা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদ্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি সেলিমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে গত বছরের ১৫ আগস্ট নিয়োগ দেয়। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়। এসব কারণে কয়েক মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন নিয়ে জটিলতাসহ শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে সালমা ও সেলিম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে করে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। লেখাপড়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছে না। তারা বিজ্ঞান মেলা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যেতে পারেনি। শিক্ষকেরা যখন খুশি বিদ্যালয়ে আসেন, আবার চলে যান। শিক্ষার্থীদের টিসি দেওয়া হোক, তারা অন্য বিদ্যালয়ে চলে যেতে চায়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর কবির বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে সালমা আক্তার ও সেলিম আহমেদ রুবেলের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এতে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ নিয়ে কথা হলে সালমা জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তারের অবসরের কারণে তিনি পদাধিকারবলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু সহকারী গ্রন্থাগারিক সেলিম বিধিবহির্ভূতভাবে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে বিদ্যালয়ের কাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছেন।

শেরপুরের নকলা উপজেলার ইসলামনগর সাইলামপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শেরপুরের নকলা উপজেলার ইসলামনগর সাইলামপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সেলিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তারকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। আমি ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একটি তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছি। যেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সালমা আক্তার বৈধ। শিক্ষা বোর্ড সালমা আক্তারকে স্বপদে বহাল রাখার যে চিঠি দিয়েছে, সেটার সত্যতাও মিলেছে এবং উচ্চ আদালতেরও একটি আদেশ রয়েছে।’

যোগাযোগ করা হলে ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ইউএনও দীপ জন মিত্র বলেন, ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক না থাকাকালীন একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজ করার কথা। এটি নিয়ে কয়েকজনের টানাহেঁচড়া করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমি শিগগির এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত