Ajker Patrika

যমুনার ভাঙনের মুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আতঙ্কে নদীর পাড়ের মানুষ

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর) 
ভাঙনের ঝুঁকিতে যমুনা নদীর পাড়ের বিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙনের ঝুঁকিতে যমুনা নদীর পাড়ের বিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় অসময়ে ভাঙছে যমুনা নদী। তীব্র ভাঙনে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছেন শত শত মানুষ। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী বর্ষার আগেই কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে চলে যাবে ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যমুনাপাড়ের বাসিন্দারা। তাঁরা ভাঙন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। সম্প্রতি নদীর পূর্বপাড়ে বাহাদুরাবাদ নৌ-থানাসংলগ্ন ইউনিয়নের খোলাবাড়ী এলাকা থেকে বড়খাল এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৬ কিলোমিটারের অধিক জুড়ে তীব্র ভাঙন চলছে।

এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে চর মাগুরীহাট, কিশোর খোলা মোড়, হুদার মোড়, মধুরভাঙ্গা গ্রাম, হাজারী গ্রাম, চর ডাকাতিয়াপাড়া, খানপাড়া, মাঝিপাড়া, চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেলোয়ার হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, টাকিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্র্যাক স্কুল, এলজিইডি সড়ক, খানপাড়া জামে মসজিদ, খানপাড়া ঈদগাহ, নূরানি কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসা এবং কয়েকটি মসজিদসহ কোটি কোটি টাকার গ্রামীণ অবকাঠামো।

এ ছাড়াও ভাঙনে ফসলি জমি, বসতভিটা প্রতিনিয়ত গ্রাস করে নিঃস্ব করেছে শত শত মানুষকে। নদীভাঙনের শব্দে রাতেও আতঙ্কে তটস্থ থাকছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া আলম মিয়া, মনি খাতুন, রেহানাসহ আরও কয়েকজন জানান, প্রতিবছর এই অঞ্চলের মানুষ নদীতে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই জুটে অন্যের বাড়ির উঠানে। এরপর খেত-খামারে দিনমজুরি করে, ঢাকায় রিকশা চালিয়ে, পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতে হয়।

কয়েক বছর টাকা জমিয়ে নতুন করে নির্মাণ করতে হয় বসতভিটা। কিন্তু সেই নতুন ভিটাগুলোও দুই-তিন বছর পর আবারও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এভাবে একটি পরিবার একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়। এর অন্যতম কারণ যমুনার তীব্র ভাঙন।

মাঝিপাড়া গ্রামের কৃষক আকবর আলী বলেন, ‘আবাদি জমি ও বসতভিটা সবই সর্বনাশা যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। দিনমজুরি করে দিনযাপন করছি। এখন অসময়ে ভাঙন শুরু হয়েছে, মাথা গোঁজার শেষ জায়গাটুকুও যদি নদীগর্ভে চলে যায়, তবে বেঁচে থাকব কী করে?’

নদীভাঙনের শিকার পলাশ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন চলছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে খানপাড়া আদর্শ গ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম। এ ছাড়া খানপাড়া, মাঝিপাড়া, কাজলাপাড়ার একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব গ্রামের লোকজন জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে।

চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, এলাকার একমাত্র সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কয়েক মাস ধরে ভাঙতে ভাঙতে নদীপাড় একদম বিদ্যালয়ের কাছে এসেছে। যেকোনো মুহূর্তে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। চারটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করে। তাই ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপাড়ের মানুষগুলো।

চিকাজানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মো. আক্কাস আলী বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে শত শত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘ভাঙন এলাকার খোঁজখবর রাখছি। ভাঙনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খাঁন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় নদী ভাঙছে। ভাঙনরোধে সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকার ভাঙনরোধ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত