Ajker Patrika

বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) 
বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

মৃৎশিল্প আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। দেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। এ জন্য মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা যায়। 

একসময়ে মেলা মানেই ছিল মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের বিচিত্র সমাহার। শিশুদের খেলার রংবেরঙের মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, পালকি, পাখি, টমটম গাড়ি, ব্যাংকসহ আরও কতো কি পাওয়া যেতে মেলায়। 

প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আজকাল কুমারপাড়ার নারী-পুরুষেরা ব্যস্ত সময় পার করেন না। কাঁচা মাটির গন্ধ তেমন পাওয়া যায় না সেখানে। হাটবাজারে আর মাটির তৈজসপত্রের পসরা বসে না। 

তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য। এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কুমার বলা হয়। অতীতে গ্রামের সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হতো মাটির জিনিসপত্র। রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, খাবারের সানকি, মটকি, সরা ইত্যাদি। 

পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি। 

ময়মনসিংহ গৌরীপুর শ্যামগঞ্জ বাজারের পাশে কান্দুলিয়া পাল পাড়ায় কয়েক ঘর মৃৎ শিল্পী ধরে রেখেছেন পৈতৃক এই পেশাকে। তাদেরই একজন মৃত জামকী চন্দ্র পালের ছেলে উকিল চন্দ্র পাল (৪৭)। 

উকিল চন্দ্র পাল জানান, লেখাপড়া তেমন শিখেননি, ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে মাটির এসব জিনিসপত্র বানানো শিখেছেন। এখন সময় খারাপ, তেমন বিক্রি হয় না, তবুও বিভিন্ন বাজারে বাজারে জিনিসপত্র নিয়ে বসেন, ক্রেতার আশায়। একসময় ব্যস্ত সময় পার করতেন আর এখন চাহিদা নেই বললেই চলে। 

উকিল চন্দ্র পাল আরও জানান, আগে সারা বছরই মাটির জিনিস পত্র তৈরি করতেন, তবে বৈশাখকে সামনে রেখে চৈত্রের শুরু থেকে কাজ বেড়ে যেতো। গ্রামে গ্রামে তখন বৈশাখী মেলা বসতো, দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করতেন। 

উকিল চন্দ্র দুই সন্তানের বাবা। তিনি চান না সন্তানরা এ পেশায় আসুক। ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। যেন তাঁরা ভালো চাকরি করতে পারে। অনিশ্চিত জীবনের দিকে সন্তানদের তিনি দিতে চান না।

গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার এবং পালদের সহজ শর্তে ঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখা জরুরি। পরিবেশবান্ধব এই শিল্পকে বাঁচাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। 

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, মৃৎশিল্প আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। এ শিল্পকে ধরে রাখতে হবে। করোনাকালীন সময়ে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আলাদাভাবে সহযোগিতার সুযোগ হয়নি।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত