Ajker Patrika

একজন কর্মকর্তা দিয়ে চলছে নালিতাবাড়ী বিটিসিএল অফিস!

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ০৭
একজন কর্মকর্তা দিয়ে চলছে নালিতাবাড়ী বিটিসিএল অফিস!

দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় পড়ে রয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) অফিস। মাত্র একজন কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত এই অফিস নানা সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকেরা।

উপজেলা বিটিসিএল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে এই উপজেলায় বিটিসিএলকে ডিজিটালে রূপান্তর করা হয়। ৫১২টি টেলিফোন সংযোগের সক্ষমতাসম্পন্ন অফিসটিতে প্রথমে ৩৪৫টি লাইন সংযোগ দেওয়া হয়। পরে বকেয়া বিল ও গ্রাহকের অনীহার কারণে ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত ১৩৭টি লাইন চালু ছিল। কিন্তু জনবলের সংকটের কারণে এবং ক্যাবলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ১৩৭টি টেলিফোন সংযোগের সব কটিই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে।

কয়েকজন গ্রাহক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের টেলিফোন লাইন অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। বহুবার জানানোর পরও মেরামত করা হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টেলিফোনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মোবাইল চালুর পর থেকে টেলিফোনের ব্যবহার কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একজন ইনচার্জ ছাড়া ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী আর কেউ নেই। জরাজীর্ণ দোতলা অফিস ভবনটি জনশূন্য। এদিকে গত চার বছরের অধিক সময় ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলার পৌর শহরের টেলিযোগাযোগ। উপজেলার বিটিসিএল অফিসের মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি ও সুইচ রুমটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় অফিস ভবনটিও জরাজীর্ণ আকার ধারণ করেছে। অফিসের সামনে অভিযোগ গ্রহণের জন্য নেই কোনো ‘অভিযোগ বক্স’। অনেক দিন ধরে অফিসের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির নিচে ভাঙা ইট ও আবর্জনা স্তূপ হয়ে পড়ে আছে। দোতলায় একটি বড় বেঞ্চ রয়েছে। তাতে খড় দিয়ে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে। রাতে সেখানে অফিসের নৈশপ্রহরী থাকেন। তবে নৈশপ্রহরী অফিসের কেউ নন। তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে রাখা হয়েছে বলে জানান অফিসের ইনচার্জ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই ভবন নির্মাণের পর থেকে আজ অবধি একবারও রং ও চুনকামের কাজ করতে দেখা যায়নি। কোনো ধরনের সংস্কারকাজ চোখে পড়েনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও এখানে বেশি একটা আসতে দেখা যায় না। একজন মাত্র কর্মকর্তা দিয়ে এই সরকারি অফিস টিকে আছে। দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম নষ্ট অবস্থাতেই পড়ে আছে। তবু মেরামত করা হয় না। 

অফিসের ইনচার্জ সজীব আহমেদ বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছি। অফিসে আর কোনো লোকজন না থাকায় আপাতত আমিই সব দেখাশোনা করছি। মাটির নিচ দিয়ে দেওয়া সংযোগের তার রাস্তা মেরামতসহ বিভিন্ন কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তা মেরামত করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার স্থান খুঁজে পেতে সময় লেগে যায়। জনবল কম হওয়ায় আমাকে একাই সব কাজ করতে হচ্ছে। জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাড়ালে দ্রুত মেরামত করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, সরকারের এই সংস্থাকে আরও আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা দরকার, যাতে করে মানুষ খুব সহজেই ডিজিটাল সেবা পেতে পারে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বিকাশ সাহা বলেন, ‘আমরা আগে এই অফিসে এসে টেলিফোন করতাম। বর্তমানে মোবাইলের প্রচলন হওয়ায় টেলিফোনের ব্যবহার কমে গেছে। তবু টেলিফোন অফিসটি সচল করা দরকার।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র এক দিনের জন্য সংযোগ পেয়েছিলাম। এরপর থেকে আমাদের অফিসের টেলিফোনটি অনেক দিন ধরেই সংযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। বিটিসিএল অফিস থেকেও কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। তাঁদের ফোন দিলেও কোনো সারা পাওয়া যায় না। শুধু মাসিক বিল চায়। বিষয়টি নিয়ে আমি সমন্বয় মিটিংয়ে কথাও বলেছিলাম।’

বিটিসিএলয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন বলেন, নালিতাবাড়ীর বিটিসিএল ও লোকবলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, লোকবল বাড়ানো এবং বিকল টেলিফোন সংযোগ সচল করতে মেরামতের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত