Ajker Patrika

সুদের টাকা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে গরুচোর আখ্যা দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন

শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরের শ্রীবরদীতে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা ব্যবসায়ী নূর আলম। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত
শেরপুরের শ্রীবরদীতে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা ব্যবসায়ী নূর আলম। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

শেরপুরের শ্রীবরদীতে ঋণের সুদের টাকা না দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে গরুচোর আখ্যা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও আজ সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

নির্যাতনের শিকার নূর আলম (৩৮) খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের ভাটি লংগরপাড়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে ও পেশায় ধান ব্যবসায়ী। গতকাল রোববার দুপুরে ভাটি লংগরপাড়ায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ধান ব্যবসায়ী নূর কয়েক বছর আগে নিজ এলাকার মো. জলিলের কাছ থেকে মাসিক ১০ শতাংশ সুদে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন এবং কয়েক মাস নিয়মিত সুদ দেন। পরে সুদ দেওয়া অনিয়মিত হয়ে পড়লে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনায় মারধরের অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেন ঋণদাতা জলিল। এ ছাড়া এলাকায় কয়েক দফা সালিস হয়। একপর্যায়ে টাকা না পেয়ে নূর আলমের মোটরসাইকেল আটক করে বাড়ি নিয়ে যান জলিল। এ নিয়ে নূর আলম শ্রীবরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এসব ঘটনা ঘিরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে।

গতকাল দুপুরে জলিল ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী নূর আলমকে লংগরপাড়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে বাড়িতে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। একপর্যায়ে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ নূর আলমের। ওই সময় জলিলের বাড়ির সবাই মিলে তাঁকে লাঠিপেটাসহ শরীরের জামা ছিঁড়ে ফেলেন।

এ ঘটনার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, নূর আলমের দুই হাত গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এক নারী তাঁর জামার কলার ধরে তাঁকে নির্যাতন করছেন। তাঁকে মারধরের সময় বলতে শোনা যায়, ‘এ একটা গরুচোর, তাই ধইরি বান্ধিছি। মাইনষের টাইন (থেকে) ট্যাহা নিছে। আংগর টাইন ৬ লাখ ট্যাহা নিছে।’

এ ব্যাপারে নূর আলম বলেন, ‘সুদের টাকা বাকি পড়ার কারণে আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আটক করে রেখেছে জলিল। পরে জলিল বলেছে টাকা-পয়সা নিয়ে আর কোনো দাবিদাওয়া নাই। এ ছাড়া সে আমার বিরুদ্ধে কোর্টে মিথ্যা মামলা করেছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেই মামলা কোর্টে পরিচালনা করছি। গতকাল আমাকে লংগরপাড়া বাজার থেকে ৬-৭ জন সন্ত্রাসী দিয়ে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে তার বাড়িতে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। উল্টা বলতেছে আমি নাকি গরুচোর। এভাবে তারা আমার মানসম্মানটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।’

ঘটনার ব্যাপারে খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশরাফুল কবীর রূপা বলেন, ‘আমি ঘটনা শোনার পর জলিলের বাড়িতে গিয়ে দেখি নূর আলম বাঁধা অবস্থায় আছে এবং বাড়িতে শতাধিক মানুষ ভিড় করছে। আমি তাদের বলি, এভাবে মানুষ আটকে রাখা যাবে না। পরে আমি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আগামী অক্টোবরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে দুই পক্ষকে সম্মত করি। বেঁধে রাখার বিষয়টা নিয়ে আমরা সামাজিকভাবে জলিলকে তিরস্কার করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জলিল বলেন, ‘আমি তার (নূর আলম) কাছে অনেক দিন ধরে টাকা পাই। তাই তাকে বাজার থেকে ধরে এনেছি। তাকে আমি কোনো মারধর করি নাই। আমি নিয়ে আসার পরে তাকে বাড়িতে স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দিয়েছিলাম। পরে তাকে যখন আটকাতে পারতেছি না, তখন বেঁধে রেখেছিলাম। শেষে স্থানীয় নেতারা ও পুলিশ এসে আমাকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘গাছে বেঁধে রাখার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে নূর আলমকে গাছে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তার আগেই স্থানীয় নেতার মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতা হয়েছে বলে জেনেছি। কোনো অভিযোগ থাকলে থানায় লিখিত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত