Ajker Patrika

শীত এলেই কদর বাড়ে: বাড়তি আয়ের সুযোগ মেলে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারে পিঠা বানাচ্ছেন নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারে পিঠা বানাচ্ছেন নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অনেকেই অধীর আগ্রহে শীতের জন্য অপেক্ষা করেন। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে শীত এলে মাদারীপুরে নিম্ন আয়ের কিছু মানুষের বাড়তি আয়ের নতুন দিগন্ত খুলে যায়। শীতকালে পিঠা বানিয়ে বিক্রি করাই হয়ে ওঠে তাঁদের প্রধান রোজগারের উৎস, যা দিয়ে চলে পুরো সংসার।

এখন আগের মতো ঘরে ঘরে শীতের পিঠা তৈরি না হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব মানুষ মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন অলিগলি, রাস্তার মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠা বিক্রি করছেন। স্বল্প পুঁজি আর কম পরিশ্রমে ভালো লাভ হওয়ায়, পিঠা বিক্রির মাধ্যমে এই পরিবারগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ, শকুনি লেকপাড়, ২ নম্বর শকুনি, কলেজের পেছনে, হাসপাতালের মোড়, থানার মোড়, ইটেরপুল, পুরানবাজার, রেন্ডিতলা, করাচি রোড, চৌরাস্তা, পানিছত্র, কাজীর মোড়, পুরাতন ফেরিঘাট, পাকা মসজিদ রোড, জেলখানার কোনা, সৈয়দারবালী, শকুনি এলাকা, পাকদী, খাগদী, বাদামতলা, মিলন সিনেমা হল-সংলগ্ন এলাকা, লঞ্চঘাট, আমিরাবাদ, মাস্টার কলোনি, সরদার কলোনি, সবুজবাগ, রাস্তি, টিবি ক্লিনিক রোড, নদীর পাড়, পাবলিক লাইব্রেরির সামনে, বিভিন্ন ক্লিনিকের সামনেসহ শতাধিক স্থানে ভ্রাম্যমাণ চুলা বসিয়ে ও ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে করে নানা ধরনের পিঠা বিক্রি হচ্ছে।

এই ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনায় বেশির ভাগ দোকানে স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে কাজ করেন। চাহিদা মেটাতে অনেকে এক থেকে আটটি পর্যন্ত মাটির চুলা ব্যবহার করছেন। দুপুরের পর থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। অনেকেই বিকেলের নাশতা হিসেবে এই গরম পিঠা খেতে পছন্দ করেন।

এসব দোকানে চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, চাপড়ি, পাকন, মুঠি পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, ছিট রুটিসহ নানা ধরনের পিঠা বানানো হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চিতই আর ভাপা পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেওয়া হয় শুঁটকি, ধনেপাতা, সরিষা, বাদাম, কালিজিরা, মরিচসহ নানা ধরনের ভর্তা। ভাপা পিঠা তৈরি করা হয় মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়, নারকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে। এ ছাড়াও ডাল ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় চাপড়ি। মচমচে চাপড়িও ভর্তা দিয়ে খেতে দেখা যায়।

মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারে পিঠা বানাচ্ছেন নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারে পিঠা বানাচ্ছেন নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিটি চিতই পিঠা ১০ টাকা, ভাপা পিঠা ১৫, চাপড়ি ১০, পাটিসাপটা ১৫, তেলে ভাজা পিঠা ১০ ও ছিট রুটি ১০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে একেকজন পিঠা বিক্রেতার দিনে আয় ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। পিঠা বিক্রির সময় ছাড়া বাকি সময় তাঁরা কেউ রিকশা চালান, কেউ গৃহকর্মীর কাজ করেন, আবার কেউ শ্রমিকের কাজ করেন। তবে শীতের এই সময়ে নিজ উদ্যোগে, নিজের ইচ্ছেমতো আয় করতে পারায় তাঁরা প্রতিবছর পিঠা বিক্রি করে আয় করছেন।

মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে মা, ভাগনি ও স্ত্রী থাকেন। কেউ ঘরে পিঠা বানায় না। কারণ, মা ও স্ত্রী দুজনে অসুস্থ। তাই যখন পিঠা খেতে ইচ্ছে হয়, তখন রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান থেকে কিনে নিই। আমি খাই, সঙ্গে আমার পরিবারও খায়। গরম-গরম পিঠাগুলো দারুণ মজা। সঙ্গে নানা ধরনের ভর্তা আরও বেশি মজা।’

হাজীর হাওলা গ্রামের আরেক বাসিন্দা নুরজাহান বেগম বলেন, ‘আমি স্কুলের শিক্ষক। সময় করে পরিবারের জন্য পিঠা বানাতে পারি না। তাই এই শীতের সময় রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে পিঠা কিনে এনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেয়ে থাকি।’

মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়ের পিঠা বিক্রেতা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘শীত কেবল শুরু হয়েছে। তবু আমাদের বিক্রি হচ্ছে। তবে শীত বেশি পড়লে পিঠা বিক্রি অনেক বেশি হবে। তখন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে এবং চুলার সংখ্যা বাড়িয়ে পিঠা বিক্রি করব। এখন প্রতিদিন ২ হাজার টাকার মতো হয়। শীত বাড়লে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হবে।’

সন্তানদের পাশে বসিয়ে রেখে শকুনি এলাকায় পিঠা বানাচ্ছেন লিপি বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
সন্তানদের পাশে বসিয়ে রেখে শকুনি এলাকায় পিঠা বানাচ্ছেন লিপি বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার পিঠা বিক্রেতা লিপি বেগম বলেন, ‘বাড়ির সামনে রাস্তায় মাটির চুলায় পিঠা বানিয়ে তা বিক্রি করে লাভ ভালোই হয়। তাই এখন গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে দিয়েছি। পুরো শীতে এই পিঠা বানানোর কাজ করব। শীত গেলে আবার গৃহকর্মীর কাজ করব।’

মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাজনীন আফরোজ বলেন, ‘শীত এলেই মাদারীপুরের অনেক নারী কাজ খুঁজে পান। তাঁরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রি করেন। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় নারীরা ঘরে বসে না থেকে আয় করছেন, সেটা খুব ভালো উদ্যোগ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...