Ajker Patrika

চিকিৎসা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
চিকিৎসা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ

খুলনার কয়রা উপজেলায় অসহায় ও অসুস্থ রোগীদের সমাজসেবা অধিদপ্তর ও আকিজ ফাউন্ডেশন থেকে চিকিৎসা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আমাদী ইউনিয়নের মসজিদকুঁড় গ্রামের মাতৃ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম একটি চক্রের মাধ্যমে গত ১ বছরে কয়রা ও পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৯ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাতৃ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম মাঠ পর্যায়ে তাঁর কিছু মহিলা কর্মীর মাধ্যমে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস রোগীদের টার্গেট করতেন। প্রতারক চক্রের নারী সদস্যরা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে তিন মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেবেন বলে প্রত্যকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নিতেন। কিন্তু এক বছরের মধ্য কোনো ব্যক্তিকে ভাতা পাইয়ে দিতে পারেননি। 

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের তেতুল তলারচর গ্রামের জোবেদা খাতুন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছি। আমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ১ লাখ টাকা ভাতা পাইয়ে দেবেন বলে নজরুল আমার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু ১ বছর হয়ে গেল কিছুই পেলাম না। এখন শুনছি সব ভুয়া।’ 

চাকলা গ্রামের আলফা খাতুন বলেন, ‘নজরুল ভাইয়ের মরিয়াম নামের এক মহিলা কর্মীর মাধ্যমে বিষয়টা আমরা প্রথমে জানতে পারি। ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে আমরা এলাকার ৯ জন মিলে নজরুল ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে আসি। ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা। ফেব্রুয়ারি মাস চলে যাওয়ার পর বলে, করোনার জন্য এখনো টাকা আসেনি। খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবা। পরে রমজান মাসে ফোন দিয়ে বলে তোমাদের টাকা চলে এসেছে। এই টাকা পেতে আবেদন এবং ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে আরও ১২ হাজার টাকা লাগবে। তখন আমরা তাঁকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে দেই। এর কিছুদিন পরে যোগাযোগ করলে আমাদের সাতক্ষীরা সমাজসেবা অফিসে টাকা এসেছে বলে জানায়। সাতক্ষীরা অফিসে গেলে তাঁরা জানায় চিকিৎসা ভাতা নামে তাঁদের কাছে কোন টাকা আসেনি।’ 

মরিয়াম খাতুন বলেন, ‘আমি না বুঝে শ্রীরামপুর গ্রামের রহিমা নামের এক মহিলার কথায় প্রায় একশ লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নজরুল ভাইকে দিয়েছি। কিন্তু কেউ ভাতা পায়নি। এখন এই লোকগুলো আমাকে এসে ধরে। তাঁদের সঙ্গে করে তাঁর বাড়িতে গেলে আমাদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদনের কপিগুলো জোর করে নিয়ে তাড়িয়ে  দেয়।’ 

এ ব্যাপারে মাতৃ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোন কাজের সঙ্গে জড়িত নই। চিকিৎসা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে আমি কোন মহিলার কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।’ 

আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল বলেন, ‘নজরুল হচ্ছে খুলনা জেলার টাউট নাম্বার ওয়ান। তাঁর স্ত্রী আমার পরিষদের মহিলা মেম্বার। মাঝে আমার পরিষদে ৩ থেকে ৪ শ মহিলা এসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। আমি ওর স্ত্রীকে ডেকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের কথা বলে দিয়েছি।’ 

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম এস দোহা বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত