Ajker Patrika

একসঙ্গে বিষপানে প্রেমিকার মৃত্যু, চিকিৎসাধীন প্রেমিকের নামে মামলা

আজিজুর রহমান, চৌগাছা (যশোর)
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ২০: ১৬
Thumbnail image

যশোরের চৌগাছায় নবম শেণিপড়ুয়া প্রেমিক-প্রেমিকা আগাছানাশক পানে আত্মহত্যা চেষ্টা করে। এ ঘটনায় প্রেমিকা মীম (১৪) মারা যায়। এদিকে হত্যার অভিযোগে এনে প্রেমিক টগর (১৫), তাঁর ভাই ও মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন কিশোরীর মা। গতকাল রোববার যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন মীমের মা পারভীন বেগম।

এদিকে প্রেমিক টগর বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ সোমবার বিকেল মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান তার বড় ভাই সাগর হোসেন (১৯)।

এর আগে ৮ জুন সকালে চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর-মির্জাপুর ইসমাইল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ মামলায় আসামিরা হলেন টগর, তার মা নাজমা আক্তার (৩৬) ও ভাই সাগর।

মীম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে। চৌগাছার জগদীশপুর গ্রামে মায়ের সঙ্গে মামা বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত সে। ৮ জুন পরীক্ষা শুরুর আগে বিদ্যালয়ের পেছনের ভবনে সে ও তার টগর আগাছানাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টার করে। পরে ১০ জুন দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় মীম। টগর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন।

যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সালমান আহমেদ শুভ অভিযোগটি গ্রহণ করে এ ঘটনায় থানায় আগে কোনো মামলা রুজু না হলে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য চৌগাছা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মীম জগদীপুর মির্জাপুর ইসমাইল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত। আসামি টগর প্রলোভন দেখিয়ে মীমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি টগরের পরিবার জানতে পেরে মীমকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে সালিসে টগরের পরিবার মীমের বাবাকে মারধর করে। মীম ক্ষোভে টগরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এতে টগর অভিমান করে ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গত ২৫ মে অপর দুই আসামি মীমদের বাড়িতে এসে স্কুলে যেতে নিষেধ করে গলিগালাজ ও খুনের হুমকি দিয়ে যায় মীমকে।

৮ জুন মীম স্কুলে পরীক্ষা দিতে গেলে আসামিরা স্কুলে গিয়ে গালিগালাজ করে আসে। সকাল পৌনে ১০টার দিকে আসামিরা কৌশলে মীমকে ক্লাস রুম থেকে ডেকে কোমল পানীয়র সঙ্গে গন্ধবিহীন কীটনাশক পান করায়। গুরুতর অসুস্থ মীমকে প্রথমে চৌগাছা পরে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনেরা। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জুন দুপুরে মীম মারা যায়।

এদিকে একই দিন চিকিৎসকেরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার টগরকে অন্যত্র নেওয়ার জন্য বলেন। পরদিন ১১ জুন টগরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার। গত শুক্রবার (১৭ জুন) থেকে টগর সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

টগরের ঢাকা মেডিকেলে কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার ব্যবস্থাপত্রএদিকে খুলনা মেডিকেলে মীমের মৃত্যুর পর খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মৃত্যুর বিষয়ে অবহিত করে মীমের বাবা আনোয়ার হোসেন একটি লিখিত বয়ান দেন। সেটি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে মীমের বাবা লেখেন ‘আমার মেয়ে মীম (১৪) ৮ জুন সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় আমার ঘরে থাকা ঘাসপোড়া কীটনাশক মোজর (কোমল পানীয়) বোতলে থাকায় ভুলবশত মোজো মনে করে খাইতে খাইতে স্কুলে পরীক্ষা দিতে যায়। স্কুলে পরীক্ষার সময় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাকে চৌগাছা হাসপাতালে নেয়। এরপর যশোর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ওই দিনই বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জুন সাড়ে ১২টায় চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মর্জি হয়।’ তখন এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। যার নম্বর ১০২। 

অথচ মেয়ের মরদেহ দাফনের পরই আনোয়ার হোসেন ও তাঁর স্ত্রী চৌগাছা থানায় টগর ও তার মায়ের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। যেটি চৌগাছা থানা-পুলিশ তদন্ত করছে। তবে টগর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি থাকায় এবং তার স্বজনেরা সেখানে অবস্থান করায় তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। এর মধ্যেই মীমের মা গতকাল আদালতে মামলা করেন এবং সেখানে বলেন চৌগাছা থানা মামলা নেয়নি।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীমের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় মীমকে নিয়ে তার মা বাবার বাড়ি জগদীশপুরে বসবাস করছেন। মীমের বাবা পরিবারের কোনো খোঁজ নিতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। 

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, অপরিণত বয়সের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে উভয়েই একসঙ্গে আগাছানাশক পান করে। প্রায় ৩০ মিনিট পরীক্ষা দিয়ে মীম অসুস্থ হয়ে পড়ে। টগর সম্পূর্ণ পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষার হলে মীম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেন শিক্ষকেরা। বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যরা হাসপতালে নেন টগরকে। উভয়কে যশোরে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে উভয়কে খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে শুক্রবার দুপুরে মীম মারা যায়। 

ওসি আরও বলেন, ‘টগর বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন বলে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে মোবাইলে শুনেছি। তাঁর বড় ভাই টগরের চিকিৎসাধীন অবস্থার ছবি এবং হাসপাতালে ভর্তির রেজিস্টারের ছবিও দিয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত