Ajker Patrika

সেতু তৈরির কাজে ধীরগতি, বিকল্প কাঠের সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট)
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৩, ১২: ৪১
সেতু তৈরির কাজে ধীরগতি, বিকল্প কাঠের সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার পুরাতন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ভৈরব নদের ওপর একটি সেতুর নির্মাণকাজ এক বছর তিন মাসেও খুব একটি এগোয়নি। অথচ সেপ্টেম্বরে ওই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। বিকল্প কাঠের সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন মানুষ। এ অবস্থায় সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারকে। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিকল্প সেতুটি দ্রুত মেরামত ও ঈদুল আজহার পরে নতুন সেতুর গার্ডারের কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। 

ঠিকাদার মাহবুব ব্রাদার্স ও সওজ সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বরে ভৈরব নদের ওপরের পুরাতন বেইলি ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর ২০২২ সালের মার্চে নতুন কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মানুষ ও যানবাহন চলাচলের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার কাঁঠালতলায় বেইলি ব্রিজের পাশে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে দেয়। তারা ওই একই মহাসড়কে ছোট-বড় মোট ১০টি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কাজ পায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এসব সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই ১০টি সেতুর একটি ভৈরব নদের ওপরের নির্মাণাধীন এই সেতু। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাঠের সেতুটি নির্মাণের পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যেই ভেঙে নড়বড়ে হয়ে একপাশে হেলে পড়ে। দুই পাশের রেলিংও অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়েই এখন সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছে। অন্যদিকে এক বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও নতুন কংক্রিট সেতু নির্মাণকাজের তেমন অগ্রগতি নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শুধু নদীর দুপাশের রাস্তার প্রান্তে ভার্টিক্যাল ওয়ালের আংশিক কাজ করে রেখে দিয়েছে। 

নদীর দুপাশের রাস্তার প্রান্তে ভার্টিক্যাল ওয়ালের আংশিক কাজ হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাসেতুর পাশে বসবাসকারী স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী দুই ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ চলাচল করে। নদীর দুপাশে কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি স্কুল মাদ্রাসা রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক শ শিক্ষার্থী এখান থেকে যাতায়াত করে। কিন্তু প্রায় পাঁচ-ছয় মাস হলো সেতুটিতে চলাচল অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। সেতুটির কিছু কিছু জায়গা ভেঙে গেছে। নদীর মাঝে সেতুর দুটি স্থানে দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। এতে পারাপারের সময় ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। এ ছাড়া সেতুর হেলে পড়া অংশ দিয়ে যাতায়াতের সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এলাকাবাসী বারবার বিকল্প সেতুটি মেরামতের দাবি জানালেও কানে তুলছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

ব্রিজ-সংলগ্ন মূলঘর ইউনিয়নের চরভৈরব গ্রামের বাসিন্দা মো. লতিফ মোল্লা, ভ্যানচালক ফিরোজ আলী, সবজিচাষি কালীদাস বাছাড়সহ কয়েক জন জানান, সেতু পেরোলেই মূলঘর এলাকা থেকে ফকিরহাট সদরে পৌঁছে যাওয়া যায়। অথচ কাঠের সেতুটি ভেঙে হেলে যাওয়ায় মানুষকে ভ্যান, অটো নিয়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে ফকিরহাট সদরে আসতে হয়। আবার ভ্যান নিয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। কাঠের সেতুটি মেরামতের পাশাপাশি দ্রুত কংক্রিটের সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানান তাঁরা। 

মূলঘর ইউপি চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বলেন, ভাঙা বিকল্প সেতুর জন্য মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিকল্প সেতু মেরামতের পাশাপাশি ওয়ার্ক অর্ডারে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে কংক্রিট সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে জনগণের চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি। 

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক মো. আশ্রাফ আলী বলেন, কোরবানির ঈদের পরে গার্ডারের কাজ শুরু হবে। এরপর স্ল্যাব ও রাস্তার কাজ করা হবে। বিকল্প সেতুটিও দ্রুত মেরামত করা হবে বলে তিনি জানান। 

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত মণ্ডল বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ১০টি সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো আবেদন করেনি। তাই ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত