Ajker Patrika

অর্থের অভাবে বালুতে শুয়ে হাসপাতালে যাওয়ার প্রহর গুনছেন আম্বিয়া

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
অর্থের অভাবে বালুতে শুয়ে হাসপাতালে যাওয়ার প্রহর গুনছেন আম্বিয়া

রোদে চিকচিক করছে বালু। তার ওপর প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আম্বিয়া খাতুন। কাঁথা দিয়ে ঢাকা আছে অসুস্থ শরীর। পাশেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন পাতানো মা নাছরিন খাতুন। চোখেমুখে লজ্জার ছাপ ফুটে উঠেছে। তবুও মানুষ দেখলেই ভারী কণ্ঠে বলছেন, ‘কাকারা খালামনিরা ওর চিকিৎসার জন্য একটু সাহায্য করে যান, এতিমের জন্য কয়ডা টাকা দিয়ে যান।’ 

মায়ের অবস্থান থেকে প্রায় তিন গজ দুরে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন পাতানো বাবা সেকেন্দার আলী। তাঁরও চোখে মুখেও লজ্জা, বেদনা, যন্ত্রণা আর হাহাকারের ছাপ। তিনি মানুষ দেখলেই কাকুতি মিনতি করে সাহায্য প্রার্থনা করছেন। বলছেন, ‘ভাই অসহায় ও অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার জন্য একটু সাহায্য করে যান। রাজশাহীতে নিতে হবে, কয়ডা টাকা দিয়ে যান।’ 

গতকাল শনিবার বিকেলে এই বেদনাদায়ক দৃশ্যের দেখা মেলে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের লালনবাজার গড়াই নদীর ঘাটে। সেকেন্দার আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিডনি ও মাত্রাতিরিক্ত ডায়াবেটিকস রোগে ভুগছেন শুয়ে থাকা আম্বিয়া খাতুন। তিনি উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের চাদপুর গ্রামের দিনমজুর সামছুল শেখের স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানের জননী। এ ছাড়া প্রায় ৩৫ বছর আগে কারখানায় কাজের সময় দুর্ঘটনায় এক হাত হারিয়েছেন তিনি। 

 আম্বিয়া খাতুন জানান, তীব্র অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন তাঁর থাকার কথা হাসাপাতালের বেডে বা বাড়ির বিছানায়। কিন্তু তাও জোটেনি। হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নদীপারের বালুর ওপর। 

এ বিষয়ে তাঁর মা নাছরিন খাতুন বলেন, ‘আম্বিয়া আমার পাতানো মেয়ে। পৃথিবীর ওর কেউ নেই। দিনমজুর স্বামী থাকেন অন্য স্ত্রীর সঙ্গে। দুই মেয়ে আছে। একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। আরেকজনের বয়স ১২ বা ১৩ বছর। পড়াশোনা করে। একটি তুলা কারখানায় কাজ করত ওই মেয়ে। প্রায় ৩৫ বছর আগে দুর্ঘটনায় এক হাত কাটা যায় আম্বিয়া খাতুনের। তারপর থেকেই আমার কাছে থাকে। অতিরিক্ত ডায়াবেটিকস রোগের সাথে ২০২১ সালে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। উন্নত টিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে নিতে হবে। কিন্তু টাকা নেই।’

পাতানো বাবা সেকেন্দার আলী বলেন,‘ কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। নিজের সামর্থ্য নেই। ভিক্ষা করছি। সকলের সহযোগিতা দরকার। এভাবে ভিক্ষার টাকায় মেয়েকে বাঁচানো যাবে না।’ 

এ বিষয়ে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘সাংবাদিকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। অসুস্থ নারী আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সার্বিক খোঁজ খবর নেওয়া হবে। চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত