Ajker Patrika

মাসে ১০০ মণ কেঁচো সার শিখার খামারে

ফারুক হোসাইন রাজ, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিভিন্ন প্রতিকূলতা উতরে শিখা রানী চক্রবর্তী এখন সফল কেঁচো সার উৎপাদনকারী। প্রতি মাসে তাঁর খামার থেকে প্রায় ১০০ মণের বেশি সার উৎপাদন হচ্ছে। এই নারী উদ্যোক্তার কেঁচো সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা ও ফসলের উৎপাদন ভালো পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। 

শিখা রানী ২০০৯ সালে তিনটি বিশেষ পাত্রে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। এখন তাঁর বাড়ির আঙিনায় বালু সিমেন্ট ও টিন দিয়ে তৈরি খামারে বিশেষ তিনটি বড় পাত্রে ও ছোট ২৫টি ভার্মি কম্পোস্ট রাখার খোপ রয়েছে। এ ছাড়া ৬টি বড় পাত্রে চলে জৈব সার উৎপাদন কার্যক্রম। শিখা রানীর খামারে তিনজন নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে, এখানে কাজ করে তাঁরা পরিবারের অর্থ জোগান দিতে পারছেন বলে আজকের পত্রিকাকে জানান কলারোয়া উপজেলার ধানদিয়া গ্রামের শিখা রানী চক্রবর্তী। 

নারী উদ্যোক্তা শিখা রানী কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ধানদিয়া ঠাকুরপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মহন কুমার চক্রবর্তীর স্ত্রী। 

নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া সফল প্রকল্প ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ-সহযোগিতা পেয়েছেন শিখা রানী। এ ছাড়া কৃষিতে ভালো চাষাবাদ ও নিরাপদ ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রশিক্ষণ দেশে ও দেশের বাইরে গিয়ে নিয়েছেন তিনি। শিখা রানী বলেন, ‘আমাদের দেশের কৃষকেরা চাষাবাদে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন মাটির গুণাগুণ নষ্ট করছে ও অন্যদিকে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এসব রোধ করতে মূলত পরিবার সমাজের কিছু মানুষের বিভিন্ন কথাবার্তা সামাল দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে ভার্মি কম্পোস্ট ও কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন কার্যক্রম তিনটি চাড়িতে (বিশেষ পাত্র) শুরু করি।’ 

শিখা রানী বলেন, ‘প্রথম দিকে কেউ আমার তৈরি সার ব্যবহার করতে চাইত না। বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষকদের বিনা মূল্যে কম্পোস্ট সার চাষাবাদের ক্ষেত্রে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এটা চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উন্নতমান মানের জৈব সার। এখন এই অঞ্চলের কৃষকেরা বুঝেছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার অত্যন্ত কার্যকারী, এখন উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকেরা নগদ টাকায় আমার কাছ থেকে সার কিনে নিয়ে যান। এটা আমার এলাকার কৃষকের ও কৃষি বিভাগের সফলতা।’ 

এলাকার কৃষকের কাছে কেঁচো সারের চাহিদা থাকলেও অর্থাভাবে বেশি উৎপাদন করতে পারছেন না বলে জানান শিখা রানী। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার বা কোনো এনজিও সহযোগিতা করে তাহলে আমার খামার বড় করতে পারব। সেখানে আরও নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হবে।’ 

শিখা রানী উৎপাদিত কেঁচো সার (ট্রাইকো কম্পোস্ট) কেজি প্রতি ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। কেঁচো কম্পোস্ট বিক্রি করেন ১২ টাকায় কেজিতে। থাইল্যান্ড জাতের কেঁচো ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। প্রতি মাসে খামার থেকে সব খরচ বাদে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয় বলে জানান শিখা রানী। 

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় খামারে নারীদের সঙ্গে কাজ করছেন শিখা রানী চক্রবর্তী। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন মিয়া বলেন, ‘কৃষিতে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে অনেক বড় ভূমিকা রেখে কাজ করছে নারী উদ্যোক্তা শিখা রানী। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তিনি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা-জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে এআইপি সম্মাননার তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে, এটি এখন অপেক্ষমাণ রয়েছে। তবে তাঁকে সফল হতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’ 

সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনেক নারী এগিয়ে রয়েছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘শিখা রানীর মতো এমন উদ্যোক্তাদের আরও স্বাবলম্বী করতে প্রশাসনিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তাঁদের মাধ্যমে একদিকে যেমন বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত