Ajker Patrika

জীবিত থেকেও সরকারি খাতায় মৃত মনোয়ারা

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ২৫
Thumbnail image

জীবিত থেকেও সরকারি খাতায় মৃত মনিরামপুরের মনোয়ারা বেগম। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়ায় লাঠি ভর দিয়ে চলাফেরা করেন তিনি। এলাকাবাসীর কাছে ৭৪ বছর বয়সী মনোয়ারা জীবিত হলেও সরকারি খাতায় তিনি মৃত। 

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে মনোয়ারা বেগম মারা গেছেন এমন তথ্য রয়েছে নির্বাচন অফিসে। সে হিসেবে গত ৫ বছর ধরে মৃত তিনি। সরকারি খাতায় মৃত হওয়ায় কোনো ভাতা পান না এই বৃদ্ধা। 
 
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মনোয়ারা বেগমের বয়স এখন ৭৪ বছর। উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের ওয়াজেদ মোড়লের স্ত্রী তিনি। ১৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান ওয়াজেদ মোড়ল। সেই থেকে বড় ছেলে হাসান আলীর সঙ্গে থাকেন তিনি। 

আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিন গোবিন্দপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পেছনে পুকুর পাড়ে কাজ করছিলেন মনোয়ারা বেগম। এ সময় বাড়িতে সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে লাঠি ভর দিয়ে হেঁটে আসেন তিনি। একে একে বাড়িতে ভিড় করেন আশপাশের লোকজন। 

মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ছেলের কাছে থাকি। ওষুধ কিনতিও ছেলের কাছে হাত পাতা লাগে। বিধবা হইছি ১৫ বছর আগে। এত বয়স হইছে আমারে কেউ কিছু দেয় না।’ 
 
বৃদ্ধা আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে রওশনারা বিধবা হয়েছে ২৫ বছর আগে। এখন পাট কলে কাজ করে। ওরেও এত দিন কিচ্ছু দেয়নি। আমার আর মেয়ের জন্য কত জনের কাছে হাঁটিছি। সবাই শুধু টাকা চায়।’ 

স্থানীয় শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মনোয়ারা বেগম অনেক আগে ভাতা পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। তাঁর ভাতা আজও হলো না। আগের ইউনিয়ন পরিষদ মহিলা সদস্য এ বৃদ্ধার ভোটার কার্ড নিয়েছিলেন। কিন্তু কার্ড করে দেয়নি। পরে শুনেছি ভোটার আইডির নম্বর দিয়ে তথ্য যাচাই করার সময় বৃদ্ধাকে মৃত দেখাচ্ছে।’ 

জীবিত থেকেও সরকারি খাতায় মৃত মনোয়ারা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলা নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তখন এই বৃদ্ধাকে মৃত দেখানো হয়েছিল। 

স্থানীয় মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি বৃদ্ধাকে সনাক্ত করে বলেন, ‘মনোয়ারা বেগম সম্পর্কে আমার ভাবি হন। তিনি ২০১৭ সালে মারা গেছেন। সে হিসেবে বৃদ্ধার মৃত্যু তারিখ দেখানো হয় ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।’ হালনাগাদ তথ্য নেওয়ার সময় তখনকার স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ গোলাম বৃদ্ধা মনোয়ারাকে মৃত সনাক্ত করে প্রত্যায়ন দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মনোয়ারা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে তিনি মৃত। ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় শিক্ষকেরা এ বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তথ্য দিয়েছেন।’ 
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত উপজেলার এমন ১০২ জনের তথ্য এসেছে যারা এখনো বেঁচে আছেন কিন্তু ভোটার তালিকায় মৃত। তাঁদের সবার বিষয়টি যাচাইয়ের পর সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের বিষয়টি আমাকে কেউ জানাননি। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যে কোনো দিন আমার অফিসে আসলে বিষয়টি সংশোধন করে দেওয়া হবে।’ 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করে আনলে বৃদ্ধাকে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত