Ajker Patrika

বিবিসির প্রতিবেদনে দেখেছেন, হাসিনা নিজেই গুলির নির্দেশ দেন: নাহিদ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরে আজ বুধবার বিকেলে জুলাই পদযাত্রার পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরে আজ বুধবার বিকেলে জুলাই পদযাত্রার পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘চব্বিশের রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছিল। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে আপনারা সবাই দেখেছেন, শেখ হাসিনা নিজেই গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য খুনি হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ দায়ী। সেই হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। ভারত সরকার গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতা-কর্মীদের নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছে।’

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বর চৌরাস্তার মোড়ে পথসভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে নাহিদসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এই পথসভায় অংশ নেন।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি কৃষকদের হত্যা করা হচ্ছে। দর্শনা সীমান্তে এক কৃষককে হত্যা করে সাত দিন পর লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। বাংলাদেশের মানুষ খুন করাই যেন তাদের একমাত্র দায়িত্ব।’

এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার ১৬ বছর গুম-খুন করেছে, নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করেছে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থনে। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, সীমান্তে হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বাংলাদেশের জনগণ, সীমান্ত, বাংলার মাটি ও মানচিত্র রক্ষা করা আমাদের ছাত্র, তরুণ, যুবকদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আমরা নিয়েছি এবং সেই দায়িত্বের ভিত্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে।’

চুয়াডাঙ্গার প্রেক্ষাপটের উদাহরণ টেনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা থেকে বলতে চাই, গত ৫৪ বছরে এই জেলার সীমান্তেই অন্তত ২০০ মানুষসহ সারা দেশের সীমান্তে হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সীমান্তে গরু চালানকারী, পাচারকারী বলে গরিব কৃষককে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ ৫৪ বছরেও কোনো সরকার এর সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, আপনাদের কঠিন হতে হবে। আমরা কোনো সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকব না। দেশের জনগণ, ছাত্র, তরুণেরা অবশ্যই দেশ, মানচিত্র, সীমান্ত রক্ষা করার পবিত্র দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সীমান্তে কৃষককে হত্যা আমরা আর মেনে নেব না।’

চুয়াডাঙ্গায় আজ বুধবার জুলাই পদযাত্রা করে এনসিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় আজ বুধবার জুলাই পদযাত্রা করে এনসিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়, সমতা, ন্যায্যতা এবং মর্যাদার ভিত্তিতেই সেই সম্পর্ক হতে হবে। বাংলাদেশই শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল নয়। ভারতের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল, এটা যেন ভারত কোনোভাবেই ভুলে না যায়।’

‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা বৈষম্যহীন সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, কিন্তু নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রহসনে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে’ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘চাঁদাবাজ দুর্নীতি, দখলদারিতে পুরো দেশ ছেয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গাবাসীকে আমরা বলতে এসেছি, আপনারা ভয় পাবেন না। আপনাদের সন্তানেরা, ছোট ছোট বাচ্চারা রাজপথে নেমেছিল ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে। তারা ভয় পায়নি, বাংলাদেশকে নতুন করে স্বাধীনতা দিয়েছিল, মুক্তি দিয়েছিল আপনাদের সন্তানেরা।’

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেহেরপুর জেলা থেকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া এলাকায় আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গাড়িতে বসে মতবিনিময়ের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা জেলার ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির সূচনা করেন।

এ সময় আশপাশের স্কুলের ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের এখন স্কুলে থাকার কথা, ক্লাস ফেলে এখানে চলে আসা একদম ঠিক হয়নি। পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমাদের দেখতে আসা তোমাদের কাজ না।’

একপর্যায়ে সারজিস বলেন, ‘তোমাদের এই ভালোবাসা দেখে হৃদয় কেঁপে উঠেছে। আমরা যেন এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারি। জীবন দিতে হলেও দেব। তোমরা মন দিয়ে পড়াশোনা কোরো। আমাদের চেয়েও বড় হও। এমন কিছু করে দেখাও, যাতে আমরা গর্ব করতে পারি।’

এরপর পদযাত্রা আলমডাঙ্গা পৌরসভার আলতাইবা মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও সারজিস আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ডা. তাসনিম জারা।

আখতার হোসেন বলেন, ‘এনসিপি বাংলাদেশের সব মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এনসিপি সবার সঙ্গে নিয়ে এমন একটি দেশ গঠন করতে চায়, যে দেশে রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমরা আমাদের শহীদ ভাই, আহত ভাইদের রক্তকে বৃথা যেতে দেব না।’

সমাবেশে সারজিস আলম বলেন, ‘একটি অভ্যুত্থানের পর আমাদের রাজনীতিতে আসার প্রয়োজন ছিল না। আমরা রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, আমরা দেখছি, আমরা যদি এখান থেকে একটু সরে যাই, চাঁদাবাজ-লুটপাটকারী সিন্ডিকেটের কালো হাতগুলো আবার সিস্টেমগুলো দখল করবে। আমাদের ডাকে যে ভাই-বোনেরা রক্ত দিল, তাদের আমানতের আমরা খেয়ানত করতে পারি না।’

সমাবেশ শেষে দর্শনা ও জীবননগর উপজেলায় পদযাত্রা করে এনসিপি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২১ বছর বয়সেই ব্যবসায় বাজিমাত, দুই বছরে বিক্রি আড়াই কোটির বেশি

নিহতের ফোনের ভিডিওতে মিলল ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র: বিবিসির অনুসন্ধান

ইন্টারনেট ছাড়াই চলবে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী

জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন হাসিনা, ফাঁস হওয়া অডিও বিশ্লেষণ করে জানাল বিবিসি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের স্বার্থ মিলে গেলে ভারতের নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হতে পারে: জেনারেল অনিল চৌহান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত