Ajker Patrika

অচল ক্রেন ও ফর্ক লিফট, বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, ০১: ১৪
অচল ক্রেন ও ফর্ক লিফট, বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট

যশোরের বেনাপোল বন্দরে আমদানি করা পণ্য ওঠা-নামানোর কাজে ব্যবহৃত বেশির ভাগ ক্রেন ও ফর্ক লিফট দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেই। তাতে পণ্য খালাস বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্দরে পণ্যজটের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে দেশের শিল্পকারখানার উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম।

জানা গেছে, স্থলপথে ভারতের সঙ্গে যে আমদানি বাণিজ্য হয়, তার বড় অংশ দেশের শিল্পকারখানা স্থাপনের যন্ত্রাংশ, রেল-বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সেতু, কালভার্ট নির্মাণের মালামাল। পাঁচ বছরের চুক্তিতে বেনাপোল বন্দরে ভারী পণ্য ওঠা-নামানোর কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্রেড বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজ। ভারী মালামাল লোড-আনলোডের জন্য বন্দরে কমপক্ষে ১৫টি ক্রেন ও ১০টি ফর্ক লিফট প্রয়োজন রয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে মাত্র সাতটি ক্রেন ও আটটি ফর্ক লিফট। এর মধ্যে সচল আছে মাত্র একটি ক্রেন ও একটি ফর্ক লিফট।

তাতে স্বাভাবিক সময়ে দিনে সাত শ ট্রাক পণ্য লোড-আনলোড হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকের নিচে। তাতে পণ্য খালাস কমে বন্দরে পণ্যজটের পাশাপাশি দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেন, ফর্ক লিফট পুরোনো হওয়ায় বেশির ভাগ সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকছে। বন্দর ও ঠিকাদার কর্তৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ দিলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকচালক রহমান বলেন, ‘বন্দরে ক্রেন, ফর্ক লিফট নষ্ট থাকায় পণ্য সময়মতো গন্তব্যে নিতে পারি না। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।’

অচল হয়ে পড়ে থাকা বন্দরের ক্রেনবেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, ক্রেন, ফর্ক লিফট অচল থাকায় পণ্য খালাস করতে না পারায় বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দরে প্রায় সাত শ ট্রাক পণ্য ওঠা-নামানোর কাজ হয়। এসব পণ্যের মধ্যে প্রায় তিন শ ট্রাক ভারী পণ্য রয়েছে। যা খালাস করতে ক্রেন ও ফর্ক লিফটের প্রয়োজন হয়। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব এ বন্দর থেকে দেওয়া হলেও সেবার বেহাল দশা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক মো. মেহেরুল্লাহ বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বর্তমানে বিদ্যুৎ, রেল প্রকল্পের মালামাল বেশি আসছে। কিন্তু বন্দরে চাহিদার তুলনায় এসব ভারী মালামাল ওঠানো ক্রেন, ফর্ক লিফট কম। তা ছাড়া বেশির ভাগ সময় এসব নষ্ট থাকায় বন্দরে পণ্যজট বেড়েছে। অচল হয়ে পড়া ক্রেন-ফর্ক লিফট সারানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হলেও প্রতিকার মিলছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রেড বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজের মেকানিক বাদশা মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা ক্রেন, ফর্ক লিফটের যন্ত্রাংশ জরুরিভিত্তিতে সংগ্রহ করতে না পারায় মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে পণ্য খালাসে বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। ক্রেন, ফর্ক লিফটের বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে অনেকটা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

 বন্দরে পণ্যজট কেবলই বাড়ছেবেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান বলেন, এক বছর ধরে বন্দরে ক্রেন, ফর্ক লিফটের সমস্যা চলছে। এখন তা আরও বাজে অবস্থায় নেমেছে। গত সপ্তাহ থেকে চাহিদার বিপরীতে ২০ শতাংশ ভারী পণ্য বন্দর থেকে খালাস হচ্ছে। এতে দাঁড়িয়ে থাকা তিন শ ভারতীয় ট্রাকপ্রতি দিনে ৩ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া বন্দরে ইয়ার্ডে পড়ে থাকা প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন পণ্যের বন্দর ভাড়া বাবদ প্রতিদিন মাশুল গুনতে হচ্ছে।

ভারী পণ্য ওঠা-নামানোয় বন্দরের নিয়োগ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আড়াই বছর আগে যখন বন্দরের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়, তখন মাসে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য খালাসের কথা ছিল। তবে গত মাসে তাদের খালাস করতে হয়েছে ৯২ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। অতিরিক্ত চাপ নেওয়ায় ক্রেন, ফর্ক লিফটের যন্ত্রাংশ বারবার অচল হচ্ছে। টেন্ডারের শর্ত সংশোধন না করলে অতিরিক্ত ক্রেন, ফর্ক লিফট সংযুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চলমান সংকটের সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত