Ajker Patrika

ঝড়ের রাতে মোমের আলোয় একই হাসপাতালে ৭ শিশুর জন্ম

বাগেরহাট প্রতিনিধি
ঝড়ের রাতে মোমের আলোয় একই হাসপাতালে ৭ শিশুর জন্ম

একদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আতঙ্ক অন্যদিকে প্রসব ব্যথা। গত সোমবার ভোর থেকে বিদ্যুৎবিহীন ছিল পুরো বাগেরহাট জেলা। এদিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসব ব্যথা নিয়ে যান আটজন অন্তঃসত্ত্বা নারী। নিরুপায় হয়ে মোমবাতি ও মোবাইল টর্চের আলোয় সফলভাবে সাতজন প্রসূতির সন্তান প্রসব করান কর্তব্যরত চিকিৎসক, মিডওয়াইফ (ধাত্রী) ও সেবিকারা। শারীরিক জটিলতা থাকায় একজনকে পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। 

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, গভীর রাত পর্যন্ত আটজন সন্তান সম্ভবা নারী আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিদ্যুৎবিহীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝড়ের রাতে খুবই আন্তরিকতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে সেবা দেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও সেবিকারা। মোবাইল ও মোমবাতির আলোয় রাত তিনটা পর্যন্ত সাতজনকে নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হন তারা। শারীরিক জটিলতা থাকায় ভোর চারটার দিকে সোনিয়া নামের এক সন্তান সম্ভবা নারীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা। 

এদিন হাসপাতালে যেসব নারীরা সন্তান জন্ম দিয়েছেন তারা হলেন—মোংলা উপজেলার সিগনাল টাওয়ার এলাকার জাকির হাওলাদারের স্ত্রী মনিরা (৩৩), মাকোরঢোন এলাকার বাসিন্দা সোহাগ সরদারের স্ত্রী মুক্তা (১৯), আরাজী মাকোরঢোন এলাকার মেহেদী হাসানের স্ত্রী বনানী (১৯), বাঁশতলা এলাকার মাছুমের স্ত্রী নাঈমা (২০), নারকেলতলা এলাকার মজিবর হাওলাদারের স্ত্রী রাজিয়া (৩০), মালগাজী এলাকার মানিক শেখে স্ত্রী মিলা (২৬) ও ভাসানী সড়কের আবুল হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম (৪২)। 

বর্তমানে নবজাতকসহ প্রত্যেকেই সুস্থ রয়েছেন। ঝড়ের রাতে এমন সেবা পেয়ে খুশি প্রসূতি মা ও তাদের স্বজনেরা। 

ঝড়ের রাতে সন্তান জন্ম দেওয়া একজন মা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘রাতে ব্যথা বাড়লে খুব ভয় পেয়েছিলাম। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাব, কি করব এই ভেবে। পরে অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালের ডাক্তারদের আন্তরিকতায় আমরা খুব খুশি হয়েছি।’ 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নুরজাহান নিশাত বলেন, ‘অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিকভাবেই অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবা দিয়েছি। বিদ্যুৎ ছিল না তাই ওই রাতে জরুরি সিজার করার মত অবস্থা আমাদের ছিল না। তাই আমরা চেষ্টা করেছি মায়েদের সুস্থ রেখে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব নিশ্চিত করতে। সকলের সহযোগিতায় সাতজন মাকে এখানে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। কিন্তু সোনিয়া নামের এক সন্তান সম্ভবা রোগীকে বাধ্য হয়ে ভোর চারটার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। কারণ ওনার কিছু জটিলতা ছিল। সব মিলিয়ে বিপদের সময় মানুষের সেবা করতে পেরে ভালো লাগছে।’ 

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীন বলেন, ‘হাসপাতালে বিদ্যুৎ ছিল না। আবার জেনারেটরেও তেল ছিল না। তারপরও সবাই মিলে সাত অন্তঃসত্ত্বা মায়ের নরমাল ডেলিভারি নিশ্চিত করেছি। ওই রাতে দায়িত্ব পালন করা সবাই খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। এ জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’ 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীন, মেডিকেল অফিসার ডা. নুরজাহান নিশাত, মিডওয়াইফ আয়শাসহ সেবিকা ও অন্যান্য কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত