Ajker Patrika

এক যুগ ধরে বন্ধ এক্স-রে, দৌলতপুরে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা

তামীম আদনান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
তালাবদ্ধ এক্স-রে কক্ষ। বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তালাবদ্ধ এক্স-রে কক্ষ। বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চিকিৎসক-সংকট, যন্ত্রপাতি বিকল এবং পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত লাখ মানুষের এই বৃহৎ উপজেলায় একমাত্র ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে চরম অব্যবস্থাপনায়। স্বাধীনতার আগে, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের দুর্দশা এখনো কাটেনি।

উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৫৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও সাতটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও একই চিত্র। অধিকাংশ ক্লিনিকে অনুপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীরা, নেই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। বিশেষ করে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নির্ভর করছেন গ্রাম্য ওষুধ ব্যবসায়ীদের ওপর। বর্ষায় নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে বালুচর পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি এক যুগ ধরে বিকল। ৩৫টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র সাতজন, যার মধ্যে নেই কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ। ফলে সিজারিয়ানসহ জটিল প্রসবের রোগীদের পাঠাতে হয় অন্য হাসপাতালে।

২০২২ সালে ছয় বছর পর চালু হওয়া অপারেশন থিয়েটারও আবার বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি বছরের মে মাস থেকে সেবা বন্ধ। এমন সংকটে উপজেলার মানুষ বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন অনুমোদিত-অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা মিলছে টাকার বিনিময়ে।

দিনে গড়ে ৫০০–৬০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন, আর ৫০ শয্যার স্থলে ভর্তি থাকেন ৮০–১২০ জন। সেবা দিচ্ছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক ও আটজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট।

চিলমারী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ পাওয়া যায় না। জমি দিলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন হয়নি। বারবার জানানো সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই।’

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। চিকিৎসক-সংকটে এ ভোগান্তি নিত্যদিনের।  ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। চিকিৎসক-সংকটে এ ভোগান্তি নিত্যদিনের। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, বাইরে থেকে খরচ করে এক্স-রে করতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হয়, যা দুঃসহ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, ‘সংকটগুলো আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, ‘আজ সোমবারের মাসিক সমন্বয় সভায় স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।’

জেলা সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘এত বড় উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল যথেষ্ট নয়। ১০০ শয্যার হাসপাতাল প্রয়োজন। একমাত্র দৌলতপুরেই এক্স-রে মেশিন নেই—এ বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫): ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি, জাতিসংঘে জরুরি বৈঠক

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত